শিরোনাম :
ভিকারুননিসায় আরও ৩৬ ছাত্রীর ভর্তি জালিয়াতির তথ্য ফাঁস গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যু দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫ রাখাইনে জান্তার আরেক ব্যাটালিয়ন দপ্তর আরাকান আর্মির দখলে বিএনপি নেতারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন: কাদের মেহেদির রং শুকানোর আগে প্রাণ গেল তরুণের ঘরের কাজে ব্যস্ত মা, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্যের ডাক বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ ভোট ডাকাত সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায় সঙ্গত: রিজভী চার বছরে মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার আরও কমলো রিজার্ভ ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটে পাসের হার ৮.৮৯ শতাংশ

সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে ‘ভুয়া’ সনদে পদোন্নতি

  • সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৩

ঢাকা : ভুয়া সনদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের (এসবিসি) অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে এক কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওয়াসিফুল হক নামে ওই কর্মকর্তা বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) দায়িত্ব পালন করছেন। তবে জাগো নিউজের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পূর্ণাঙ্গ ডিপ্লোমা ও সনদের বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সম্প্রতি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর। যার অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরও পাঠানো হয়েছে।

ওয়াসিফুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিআইএ ডিপ্লোমা পাস করেন ২০০৩ সালে। অথচ ভুয়া বিআইএ ডিপ্লোমা সনদ দাখিল করে ২০০১ সালে তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পান।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওয়াসিফুল হক। তার দাবি, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। পেশাগত শত্রুতার কারণে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে। তাছাড়া সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিআইএ ডিপ্লোমার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওয়াসিফুল হক যে সময় পদোন্নতি পান, সে সময় (২০০১ সাল) সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পদোন্নতির ক্ষেত্রে (২০০১ সালে) বিআইএ ডিপ্লোমার জন্য ১০ নম্বর ছিল। এই ১০ নম্বর যোগ করে তিনি পদোন্নতির মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পদোন্নতি পান।

বিআইএ ডিপ্লোমার নম্বর যোগ না হলে ওয়াসিফুল হক পদোন্নতি পেতেন না বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বিআইএ ডিপ্লোমার নম্বর যোগ না হলে তিনি মেধাক্রমে সর্বশেষ অবস্থানে থাকতেন এবং পদোন্নতি হতো না। তিনি এখনো সহকারী জেনারেল ম্যানেজার থাকতেন, জেনারেল ম্যানেজার হওয়া তো দূরের কথা।

এতে আরও বলা হয়েছে, সে সময় একসঙ্গে ২২ জন পদোন্নতি পান। অথচ তিনি এখন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

চিঠিতে এ ঘটনা অতিদ্রুত তদন্ত করে বিধি মোতাবেক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছে।

অভিযোগপত্রের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে কিছু প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সার্কুলার অনুযায়ী, জুনিয়র অফিসার থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয়ের ওপর নম্বর দেওয়া হয়। এই পাঁচ বিষয়ে সর্বমোট ১০০ নম্বর।

এর মধ্যে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ ৭০ নম্বর, পেশাগত যোগ্যতা (বিআইএ ডিপ্লোমা/এসিআইআই) ১০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তি ১০ নম্বর, পরিচ্ছন্ন চাকরিকাল ৫ এবং সাক্ষাৎকার ৫ নম্বর।

এর মধ্যে ওয়াসিফুল হক ৬৯ দশমিক ৫০ পয়েন্ট পেয়ে পদোন্নতির তালিকায় ১১ নম্বরে ছিলেন। আর তালিকায় সবশেষ স্থানে থাকা কর্মকর্তার নম্বর ছিল ৬২ দশমিক ৫০ নম্বর।

এ বিষয়ে ওয়াসিফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশ্ন করা হয়- আপনার বিষয়ে একটি অভিযোগ উঠেছে আপনি ২০০৩ সালে বিআইএ ডিপ্লোমা নেন, কিন্তু ভুয়া সনদ দিয়ে ২০০১ সালে পদোন্নতি নিয়েছেন। এর উত্তরে তিনি প্রথমে বলেন, এটা অ্যাবসুলেটলি একটা বাজে কথা। আপনি ইন্স্যুরেন্স একাডেমিতে গিয়ে চেক করতে পারেন। এখানে কোনো কিছু নেই। এগুলো আসলে আমাদের জেলাসি। আমাদের সঙ্গে কেউ জিএম হতে পেরেছে, কেউ হতে পারেনি। তারা এগুলো করে আরকি। এগুলো অ্যাবসুলেটলি বাজে কথা।

তার মানে আপনার বিআইএ ডিপ্লোমা কি ২০০১ সালেই নেওয়া? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার ডিপ্লোমা ওই সময়েই নেওয়া। আর ওটার সঙ্গে তো আমাদের পদোন্নতির ডাইরেক্ট কোনো সম্পর্ক নেই।

ডিপ্লোমার সঙ্গে তো ১০ পয়েন্টের একটা বিষয় আছে, পাল্টা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ১০ পয়েন্টের সম্পর্ক ওই সময় ওরকম থাকলেও এটার সঙ্গে এসিআর-ও আছে। অন্য বিষয়ও আছে। খালি ডিপ্লোমা করলেই তো আর পদোন্নতি হয় না। এসিআর-এ তখন অনেক নম্বর ছিল। পদোন্নতির অন্য অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়া থাকে। ডিপ্লোমা হচ্ছে ওয়ান অব দ্য ক্রাইটেরিয়া।

ডিপ্লোমার নম্বর যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে তো দেখা যায় আপনার নম্বর ৬০ এর নিচে চলে আসে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না না। ওই সময় ১০ নম্বর অ্যাডও হয়নি। ১০ নম্বর অ্যাড হয়েছে কি হয়নি, ডিপার্টমেন্ট কী করেছে, এগুলোর নাম্বারিং তো আমার জানা নেই। ওরা কত নম্বর কী করেছে এগুলো আপনি একাডেমিতে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন।

এসময় তাকে বলা হয় ইন্স্যুরেন্স একাডেমির একটি কাগজ আমাদের কাছে আছে। সেখানে উল্লেখ আছে আপনি ২০০৩ সালে ডিপ্লোমা করেছেন। এর উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ফুল ডিপ্লোমা থাকলে তখন ১০ নম্বর যোগ হতো। হাফ ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট থাকলে বা পাঁচটি কোর্স সম্পূর্ণ করা থাকলে পাঁচ নম্বর যোগ হতো। সেভাবেই নাম্বার ভাগ ভাগ হয়ে হতো। ডিপ্লোমাতে ১০ নম্বর। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য ১ নম্বর গণনা করা হতো। ডিপ্লোমার মধ্যে তখন তিনটি সেকশন ছিল। সে হিসেবে নম্বর ১০ এবং ৫ এভাবে কাউন্ট হতো। তো ওটার সঙ্গে পদোন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো লোকজন বাজে কথা ছড়াচ্ছে।

তার মানে ওই সময় আপনার পূর্ণাঙ্গ ডিপ্লোমা ছিল না, কিন্তু ডিপ্লোমার কিছু অংশ করা ছিল, এমন কিছু? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, তখন ফুল ডিপ্লোমা করা না থাকলেও ৫০ শতাংশ হয়তো করা ছিল। এক্সাক্টলি ইয়ারটা আমার এখন খেয়াল নেই। সেটা তো ২০-২২ বছর আগের কথা। আমাদের বহু জিএম ডিপ্লোমা ছাড়াই জিএম হয়েছেন। আমার ডিপ্লোমা বহু আগেই করা। এখানে ৫ নম্বর, ১০ নম্বর, ২০২১ সাল ২০০১ সাল এগুলো কে বলে, কারা বলে আপনাদের বোঝা উচিত। এর পিছনে একটা খারাপ উদ্দেশ্য কাজ করে।

তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে একটা প্রফেশনাল শত্রুতা কাজ করে। একজন আরেকজনকে ল্যাং মারামারি কাজ করে। এ জিনিসটা সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে খুব বেশি। অফিসের সবাই তো বন্ধু না, অনেক শত্রুও আছে। তারাই একটা সত্য-মিথ্যা দাঁড় করায়। ভুয়া সনদ হলে তো মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতো। এ ধরনের কত অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে পড়ে। বস্তা বস্তায় পড়ে। শুধু আমার নামে না, বহু লোকের নামে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা পড়ে আছে।

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved