আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক করিডোর পুরোপুরি চালু করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে রাশিয়া-ইরান-ভারত। মঙ্গলবার এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সিরিজ আলোচনার সর্বশেষ। এই রুট চালু হলে মধ্য এশিয়া এবং ককেশাসের প্রায় এক ডজন দেশ উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই করিডোর পশ্চিমা দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে।
ইরান ও ভারত তাদের সর্বশেষ আলোচনায় চাবাহার বন্দরের অগ্রগতিসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে কথা বলেছে। ইরানের রাষ্ট্র-পরিচালিত শিপিং কোম্পানি বলেছে যে, তারা আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর (আইএনএসটিসি) ব্যবহার করে ভারতে রাশিয়ান পণ্যের প্রথম ট্রানজিট সফলভাবে সম্পন্ন করার পর এই রুট চালু করার উদ্দেশ্যে আলোচনা করছে। ভারত চাবাহার বন্দরকে আইএনএসটিসি এর আওতায় আনার অনুরোধ করেছে।
আইএনএসটিসির বিষয়ে সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মস্কো এটিতে আরও মনোযোগ দেবে, কারণ এটি ক্যাস্পিয়ান অববাহিকাকে শক্তি এবং সরবরাহের কেন্দ্রে পরিণত করতে সহায়তা করতে পারে।
এই পথে রাশিয়া থেকে ভারতে পণ্য এসেছে ২৪ দিনে
গত মাসে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান ভারত সফর করেন এবং আঞ্চলিক সংযোগের বিষয়ে আলোচনা করেন। সে সময় শহীদ বেহেশতি টার্মিনাল, চাবাহারের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এটি আফগানিস্তানকে সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে এবং এই অঞ্চলের জন্য একটি বাণিজ্যিক ট্রানজিট হাব হিসাবে আবির্ভূত হবে।
এ নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনা জোরদার করতে চায় ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার বোর্ড সভায় ইরানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
সম্প্রতি ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিপিং কোম্পানি রাশিয়া থেকে নতুন রুটে ভারতে পণ্য নিয়ে এসেছে। আস্ত্রাখান থেকে জাহাজটি ক্যাস্পিয়ান সাগর পার হয়ে ইরানের বন্দর আনজালি আসে। তারপর পণ্য সড়কপথে দক্ষিণের পোর্ট অফ বন্দর আব্বাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আবার জাহাজে চাপানো হয়। এরপর সেটি ভারতের মুম্বাই বন্দরে পৌঁছায়। এই রুটই হবে নতুন বাণিজ্যিক করিডোর, যেখানে রাশিয়া থেকে পণ্যবাহী জাহাজ ইরান হয়ে এশিয়ার দেশগুলোতে আসবে।
ইরানের চাবাহার বন্দর- ফাইল ফটো
আস্ত্রাখানের ইরান ও রাশিয়ার যৌথ মালিকানাধীন টার্মিনালের ডিরেক্টর দারিয়ুশ জামালি বলেন, নতুন রুটে এই মাল পাঠানোর বিষয়টি সমন্বয় করছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান শিপিং লাইনস গ্রুপ। তাদের রাশিয়া ও ভারতে অফিস আছে। রাশিয়া থেকে পণ্য ভারতের মুম্বাইতে পৌঁছতে ২৪ দিন সময় লেগেছে।
রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর ইরান এখন উত্তর-দক্ষিণ ট্র্যানজিট করিডোর প্রকল্প আবার পুনরুজ্জীবীত করতে চাইছে। এর ফলে যারা রাশিয়া থেকে ইরান হয়ে এশিয়ার বাজারে পৌঁছনো যাবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাস্পিয়ান সাগরে ইরানের বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্বের বন্দর চাবাহার পর্যন্ত রেলরোড লাইন তৈরির পরিকল্পনা আছে। এই রেলপথ চালু হলে পণ্য আনা নেয়ার সময় আরও অনেক কমে যাবে।
ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে পণ্যবাহী জাহাজ সুয়েজ খালের মাধ্যমে রটারডাম (নেদারল্যান্ডস), এন্টওয়ার্প (বেলজিয়াম), পাইরাস (গ্রীস) এবং ভ্যালেন্সিয়া (স্পেন) বন্দরে যায়। এই সমস্ত বন্দরগুলো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন। আর রাশিয়া ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে পণ্য ভারতে পাঠাতে চায়।
পশ্চিম নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যাবে এই রুটে
এদিকে মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রতিনিধি ডেনিস আলিপভ ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তির উপর জোর দিয়ে বলেছেন, মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ইতিবাচক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে।
এক সাক্ষাৎকারে আলিপভ বলেন, ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পরে বাণিজ্যে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া ও ভারত সফলভাবে এই বাধাগুলির বেশিরভাগ অতিক্রম করেছে। নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে তবে অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
তবে পশ্চিমারা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এই নতুন উদ্যোগকে কেমনভাবে গ্রহণ করবে এবং ভারতের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে পারে সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত ভারতীয় বিশ্লেষকরা।
সূত্র: স্পুত্নিক, এনডিটিভি, দ্য ট্রিবিউন