শিরোনাম :
রাখাইনে জান্তার আরেক ব্যাটালিয়ন দপ্তর আরাকান আর্মির দখলে বিএনপি নেতারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন: কাদের মেহেদির রং শুকানোর আগে প্রাণ গেল তরুণের ঘরের কাজে ব্যস্ত মা, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্যের ডাক বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ ভোট ডাকাত সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায় সঙ্গত: রিজভী চার বছরে মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার আরও কমলো রিজার্ভ ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটে পাসের হার ৮.৮৯ শতাংশ গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো: ফখরুল একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন একদিন পর বাংলাদেশি যুবকের লাশ ফেরত দিল বিএসএফ ত্রিশালে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

পিল খেয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখছে কিশোরীরা

  • মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে পানির জন্য হাহাকার লেগেই আছে। গ্রীষ্মকালে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। অতিরিক্ত লোনা পানির ব্যবহারে জরায়ু সংক্রান্ত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে নারীরা। এমন অবস্থায় ঋতুস্রাব চলাকালে লোনা ও নোংরা পানির ব্যবহার কমাতে জন্মনিয়ন্ত্রণকরণ পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ করছে উপকূলের কিশোরীরা। উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে।

তবে বিষয়টি কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিশোরীদের এভাবে পিল ব্যবহার তাদের মস্তিষ্কেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের ১৫ বছরের এক কিশোরী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানায়, ৫ মাস ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণকরণ পিল খেয়ে নিজের মাসিক বন্ধ করে রেখেছে সে। বিষয়টি পরিবারের অগোচরে।

ওই কিশোরী বলে, ‘পিরিয়ডকালীন আমি সব সময় পুরোনো কাপড় ব্যবহার করি। সেগুলো ডোবার লোনা এবং অনেক নোংরা পানিতে ধুইতে হয়। এসব থেকে বাঁচতেই পাশের বাড়ির এক ভাবির কাছ থেকে সুখী বড়ি (সরকারিভাবে বিতরণ করা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল) খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রাখি।

‘লোনা পানি ব্যবহার করায় আমার মাকে দীর্ঘদিন ধরে জরায়ু রোগে ভুগতে দেখেছি। আমি এই রোগে ভুগতে চাই না। এটা খুব কষ্টের। তাই পিরিয়ড বন্ধ রাখতে ভালোই লাগে।’

ওই কিশোরীর পরামর্শে তার আরও দুই বান্ধবীও একইভাবে পিল খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রাখে বলে জানায় সে।

গাবুরার নয় নম্বর সোরা গ্রামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘প্যাড কেনা আমাদের জন্য সহজ না। এদিকে যে পুকুরে সবাই গোসল করে সেখানে মাসিকের (ঋতু) কাপড় ধোয়া যায় না। ধুতে হয় বাড়ির পাশের ডোবায় বা ঘেরের পানিতে। এই পানি অনেক লোনা আর নোংরা।

‘কয়েক মাস আগে শ্যামনগরে একটি কর্মশালায় গিয়ে জানতে পারি এই পানিতে ধোয়া কাপড় পিরিয়ডের সময় ব্যবহার করলে ক্ষতি হতে পারে। সেখানে কয়েকজন মেয়ে বলেছিল তারা পরীক্ষার সময় পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ করে।

‘আমিও বাড়িতে এসে মায়ের বড়ি (পিল) চুরি করে খেয়ে দেখি। এভাবে কয়েক মাসই পিরিয়ড বন্ধ রেখেছি। এতে করে মাসের ওই সময়ে লোনা পানির ব্যবহার কিছুটা হলেও কম করতে হয়।’

অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর মহাসচিব ডা. ফারহানা দেওয়ান জানান, এভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে নিয়মিত পিল খাওয়া কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি ও অবস্টেট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ফারহানা বলেন, ‘কিশোরী মেয়েরা যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া পিল খায়, অবশ্যই সেটা ঠিক নয়। আমরা যখন ওরাল পিল কাউকে দিই, তখন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রাখি। পিলের জন্য সে যোগ্য কি না পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে তারপর তা (পিল) খাওয়ার পরামর্শ দিই।

‘এখন কেউ যদি শুধু পিরিয়ড বন্ধ করার জন্য পিল খায় সেটা ঠিক নয়। কারণ ওষুধের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

‘পিল খেয়ে এক মাস পিরিয়ড বন্ধ করা যেতে পারে। তবে দিনের পর দিন পিরিয়ড বন্ধ রাখলে তার ব্রেইনে যেখান থেকে স্টিমুলাস আসে, সেখানে নেগেটিভ ইফেক্ট হবে। একটা সময়ে তার নিয়মিত পিরিয়ড হবে না। যা তাকে বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।’

স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, একটি পিলের পাতায় ২১টি সাদা এবং সাতটি লাল ট্যাবলেট থাকে। একটানা ২১টি সাদা ট্যাবলেট খেতে বলা হয়। এরপর সাত দিন গ্যাপ দিতে হয়। ওই সাত দিনে সাধারণত মেয়েদের পিরিয়ড হয়। এ সময় লাল ট্যাবলেটগুলো খাওয়া যায়। কিন্তু কেউ যদি ওই সাত দিন লাল ট্যাবলেট না খেয়ে আবার সাদা ট্যাবলেট শুরু করে তাহলে তার পিরিয়ড বন্ধ থাকবে।

এসব এলাকায় পিলের বিতরণ কিছুটা বেড়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে সেটা কিশোরীদের পিল খাওয়ার কারণে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাননি তারা।

কৈখালী ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারী মনিরা জামিলা বলেন, ‘এসব এলাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে বড়ি (পিল) সবচেয়ে জনপ্রিয়। সাধারণত বিবাহিত মেয়েদেরই বড়ি সরবারহ করি। তবে অনেক সময় বোন, ভাবি, মা, চাচিদের জন্য কিশোরী মেয়েরা এই বড়ি সংগ্রহ করতে আসে।’

২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এবং আইসিডিডিআরবির চালানো ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন সমীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী এবং কিশোরী তাদের মাসিকের সময় পুরোনো কাপড়ের টুকরা ব্যবহার করেন।

ওই সার্ভেতে বলা হয়, দেশের ৪০ শতাংশ মেয়ে মাসিক ঋতুচক্রের সময় তিন দিন স্কুলে যায় না। এই ৪০ শতাংশের তিন ভাগের এক ভাগ মেয়ে জানিয়েছে, স্কুলে না যাওয়ার কারণে তাদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০১৯ সালে প্রকাশিত অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার নারী ও কিশোরীরা মাসিকের সময় ব্যবহৃত কাপড় লবণ পানিতে ধুয়ে আবারও সেটি ব্যবহার করেন। এভাবে বারবার লোনা পানিতে মাসিকের কাপড় ধোয়া এবং সেই কাপড়ের ঘন ঘন ব্যবহার মেয়েদেরকে স্বাস্থ্যগত হুমকির মধ্যে ফেলে। এগুলো কখনও কখনও চর্মরোগ এবং অন্যান্য যৌন সমস্যার জন্যও দায়ী।

তিনটি বাংলাদেশি সংস্থা এ সমীক্ষাটি চালিয়েছে।

অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিদিনের মৌলিক চাহিদা মেটাতেই যেখানে হিমশিম, সেখানে মাসে মাসে মেয়েদের জন্য ১০০-১৫০ টাকার স্যানিটারি প্যাড কেনা বেশ কষ্টসাধ্য।

কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হাজতখালী গ্রামের লক্ষ্মী রাণী মণ্ডল  বলেন, ‘পরিবার নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ঘর বেঁধে থাকি। এখানে তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে মেয়ের জন্য প্যাড কেনার কথা কল্পনাও করতে পারি না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রান্তিক এসব কিশোরীকে এই স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় কিশোরীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরকেও সচেতন করতে হবে। স্যানিটারি প্যাড সহলজলভ্য করতে হবে। প্রয়োজনে প্রান্তিক মেয়েদের জন্য সরকারিভাবে প্যাড বিতরণের পক্ষে মত দেন অনেকে।

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved