শিরোনাম :
রাখাইনে জান্তার আরেক ব্যাটালিয়ন দপ্তর আরাকান আর্মির দখলে বিএনপি নেতারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন: কাদের মেহেদির রং শুকানোর আগে প্রাণ গেল তরুণের ঘরের কাজে ব্যস্ত মা, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্যের ডাক বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ ভোট ডাকাত সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায় সঙ্গত: রিজভী চার বছরে মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার আরও কমলো রিজার্ভ ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটে পাসের হার ৮.৮৯ শতাংশ গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো: ফখরুল একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন একদিন পর বাংলাদেশি যুবকের লাশ ফেরত দিল বিএসএফ ত্রিশালে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

আগামী দিনের সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকতা ও বাংলাদেশ

  • শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১

ফারহানা সালাম
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন রাতের নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ করে ভোরের সোনালী আলো আমাদের সামনে সমস্ত জগৎ সংসারকে এনে হাজির করে, আমাদের চোখের সামনে প্রতিভাত হয়ে ওঠে তার সমস্ত রুপ মাধুরী, সংবাদমাধ্যমও তেমনি সেই জগৎ সংসারের কন্ঠস্বরের মত গৃহের চার দেয়ালের অভ্যন্তরকে পৃথিবীর উদার আকাশের নিচে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়, দৈনন্দিন জীবনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ মানুষকে বিশ্বমানবতা ও বিশ্ব নাগরিকতার উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে পৌঁছে দেয়। বর্তমান পৃথিবীতে সংবাদমাধ্যম পরিণত হয়েছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার একটি আবশ্যকীয় উপাদানে।

কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের আজকের এই অবয়ব কি অতীতে ছিল, ভবিষ্যতে কি এমনি থাকবে সংবাদমাধ্যম, অতীত সাংবাদিকতা আর বর্তমান কি একই, আজকের বাংলাদেশ কি আগামী দিনেও এমন সংবাদপত্র দেখবে? আগামী দিনের কাগজে মুদ্রিত সংবাদপত্র কি আদৌ থাকবে, নাকি সংবাদপত্র হয়ে যাবে মোবাইল আর কম্পিউটার নির্ভর, কাগজে মুদ্রিত সংবাদপত্রের ঠাঁই হবে টেলিগ্রাফ যন্ত্রের মত জাদুঘরে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে এক ঝলক অতীতে দৃষ্টি ফেরানো যেতে পারে। কেননা, অতীতকে আশ্রয় করেই বর্তমান এবং বর্তমানের ভিত্তির ওপরই ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে।

সংবাদপত্র ক্রমোন্নতি মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে আমাদের দেশে হস্তলিখিত সংবাদপত্রের প্রচলন ছিল এমন তথ্য পাওয়া যায়। এ কথা অনস্বীকার্য যে পঞ্চদশ শতকের গুটেনবার্গের আবিস্কার তথ্যের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, আর আজকের যুগের অপ্সেট প্রেস কিংবা লেজার প্রিন্টার যে সেই যুগের ছাপাখানার হাত ধরেই এসেছে। একথা বলা বোধ করি অত্যুক্তি হবে না- ছাপাখানা আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত জ্ঞান বা তথ্য ছিল সীমিত, হাতে লেখা বই, পুঁথি ও পান্ডুলিপি নির্ভর। সামান্য কিছু মানুষের হাতে আটকা পড়েছিল জ্ঞান ও বিদ্যার জগত। মানুষের সংবাদ পিপাসা ও দেশ বিদেশের জ্ঞাতব্য বিষয় জানার একমাত্র উপায় ছিল লোকমুখের বুলি।

এতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যেই তথ্য আদান-প্রদানের সযোগ ছিল সীমাবদ্ধ, ব্যাপক মানুষের তথ্য জানার কোন উপায় ছিল নাহ, আর এর সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল যে, এখন প্রিন্ট মিডিয়া বা সংবাদপত্র সুস্পষ্ট নিখুঁত ও স্থির তথ্য দেয় এবং তাকে আরো প্রমাণিত করার জন্য আলোকচিত্র সংযোজন করে চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জনের নিশ্চয়তা প্রদান করে তার নিদারুণ অভাব ছিল। ফলে লোকমুখের শোনা কথার সঙ্গে কল্পনার রঙ চড়িয়ে বা মনের মাধুরী মিশিয়ে ঘটনা আর রটনাকে এক করে ফেলা হতো।

বস্তুনিষ্ঠ এবং যথার্থতার ক্ষেত্রে ছাপানো সংবাদপত্র তাই এক বিরাট ভূমিকা পাল্ন করে, সংবাদ হয়ে ওঠে তাই প্রতিটি ঘটনার সত্যনিষ্ঠ রেকর্ড বা প্রামাণ্য দলিল। আধিপত্যবাদী ব্যক্তি গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থে এতে যে কিছু এদিক-ওদিক হয় না তা নয়- অবশ্যই হয়, তবুও ছাপানো তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ বেশি। সেদিক থেকে সংবাদপত্র মানুষের সত্য ও তথ্য জানার ক্ষেত্রে আজকের দিনে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য- যা অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দ্বারা সম্ভব নয়। আর সংবাদপত্র তো দেশে একটাই মাত্র প্রকাশিত হয় না, অসংখ্য পত্রিকা প্রকাশিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে।

আজকের দিনের সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের সদাজাগ্রত প্রহরী, মহাবিচারপতির বিচারশালায় সে নিপীড়িত মানুষের পক্ষ সমর্থন করে। কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হলে কিংবা গণতন্ত্রের পবিত্রতা কোনো কারণে কলুষিত হলে সংবাদমাধ্যমের নির্ভীক কণ্ঠ সেখানে সোচ্চার হয়ে ওঠে। সংবাদমাধ্যম তাই আজ জনগণের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের সর্বদা দায়িত্বশীল অবিভাবক, মহামানবের দরবার, গণদেবতার বিচারশালা, জনস্বার্থের উদ্দেশ্যে গৃহীত কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রুপায়ন ও তার সাফল্য বা ব্যর্থতার চিত্র সংবাদমাধ্যম প্রচার করে।

বর্তমান শতাব্দীকে বলা হচ্ছে ইনফরমেশন সোসাইটির শতাব্দী। সব কিছুর মূলে বিপুল তথ্য উৎসের দ্বারপ্রান্তে যাওয়া এবং তথ্য প্রবাহকে জগতের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা। আগামী দিনের সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের এদিকে লক্ষ্য রেখেই সংবাদ যাচাই-বাছাই করে পরিবেশন করতে হবে। ডিজিটাল টেকনোলজি যেন বহুমত, বহুপথ এবং তথ্য ও যুক্তিভিত্তিক চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটায়, শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতিকে যুক্ত করে এবং বিশ্বব্যাপী একটি সুষম, আনন্দময় চিন্তাশীল সভ্য মানুষের সমাজ গড়ে তোলে, এ বিশ্ব যেন মানুষের বাসযোগ্য হয়ে ওঠে, আগামী দিনের সংবাদমাধ্যমকে সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে হবে।

আর তা করতে হলে সংবাদ মাধ্যমের গুণগত মানোন্নয়ন বিশেষ করে বস্তনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশ/প্রচারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত/প্রচারিত মতামত যেন জনসাধারণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়, সে বিষয়ে আগামী দিনে অত্যন্ত মনোযোগী হতে হবে। বস্তনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশ/প্রচার না করার কারণে ঘটে যেতে পারে মহাবিপর্যয়। ইরাকে এত বড় যুদ্ধ হয়ে গেল শুধু উল্টোপালটা তথ্য প্রচারের জন্য। সাধারণ মানুষ সংবাদমাধ্যমের তথ্যনির্ভর কাহিনীকেই সত্য বলে ধরে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে অ
সত্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ বিশাল বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মতো ঘটনাই তার প্রমাণ।

তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা আমরা এখন নিতে পারি দু’হাত ভরে। ওয়েবসাইট খুললেই দেখা যায়, আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে অসংখ্য তথ্য। সেই ভাসমান তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে সাজিয়ে তোলার যোগ্যতাও চাই, যেখানে আমরা বড়ই দুর্বল। আজকাল সাংবাদিকতায় আসছেন অসংখ্য তরুণ, কিন্তু তাদের সামনে পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনের পরামর্শ, তাগিদ, সচেতনতা কিংবা পরিকল্পিত প্রশিক্ষণের কথা হচ্ছে না। ওদের দোষ ধরা হয়, শুধরে দেয়ার পদ পদ্ধতি বলা হয় না। আগামী দিনের সাংবাদিকদের প্রস্তুত করার দায়িত্ব আজকের সাংবাদিককেই নিতে হবে। আগ্রহী তরুণদের হাতে একটি আইডি কার্ড ধরিয়ে দিলেই হবে না।

যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তা দিতে হবে। অন্যথায় আগামীর সাংবাদিকতা বিপথগামী হতে পারে। পরিশেষে ‘ধুমকেতু’ সম্পাদক বিদ্রোহী কবি, আমাদের জাতীয় কবির কথার সূত্র ধরেই বলব, আগামী দিনের সাংবাদিকরা যেন রণক্লান্ত না হন, লড়তে পারেন, মুক্তচিন্তা এবং পরিকল্পিত মননশীলতার অধিকারী সাংবাদিকদের জন্য বাংলাদেশ হয়ে উঠুক একটি আদর্শ স্থান। কিশোর কবি সুকান্তের আকাঙ্খা অনুযায়ী ‘যে শিশু জন্ম নিয়েছে আজ রাতে, এ বিশ্ব যেন তার বাসযোগ্য হয়।’

লেখক: ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার, এটিএনবাংলা।

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved