শিরোনাম :
কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগ এখন গোপালগঞ্জ আ.লীগের কার্যালয়: রিজভী তুরস্কের গণমাধ্যমে খালেদা জিয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ সরকার আইনের অপব্যাখা দিয়ে খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে হত্যা করতে চায় : ফখরুল ঢাকায় ৫.৩ মাত্রার ভূমিকম্প ডেঙ্গুতে আরও ১১ জনের মৃত্যু চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা খালেদা জিয়ার কিছু হলে বাংলাদেশে আগুন জ্বলবে: টুকু সূচকের সামান্য উত্থান, কমেছে লেনদেন এলপিজির নতুন দাম নির্ধারণ জিকো-মোরসালিনসহ পাঁচ ফুটবলার নিষিদ্ধ আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দিবেন না, যুক্তরাষ্ট্রকে তথ্যমন্ত্রী ইরাকে কুর্দিদের স্থাপনায় তুরস্কের বোমা হামলা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করতে চায় : হানিফ ‘আজকের শিশুদের নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’

হুমকির মুখে ডলফিন ও তিমি, ৩৩ মাসে মৃত ৬৭

  • সোমবার, ৪ অক্টোবর, ২০২১

ঢাকা : প্লাস্টিক দূষণ, আশ্রয়স্থল বিনাশ, শিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারসহ নানা কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে সামুদ্রিক প্রাণী। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও প্রাণীর সমুদ্রের মোহনায় ছুটে আসার প্রবণতা বেড়েছে।

জালেও আটকা পড়ছে নানা প্রাণী, বিশেষত বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন ও তিমি। কুয়াকাটা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন নদীতে একের পর এক ভেসে আসছে মৃত ডলফিন ও তিমি। মৃত প্রাণী সংরক্ষণ, ময়নাতদন্ত কিংবা গবেষণার কোনো উদ্যোগ না থাকায় এগুলো তড়িঘড়ি করে মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। এতে তিমিরেই থেকে যাচ্ছে প্রাণীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।

গত ৩৩ মাসে মিলেছে ৬৭টি মৃত ডলফিন ও তিমি। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশ থেকে তিমি ও ডলফিন বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বিলুপ্তির হাত থেকে তিমি-ডলফিন রক্ষায় ময়নাতদন্ত ও গবেষণা বাড়াতে হবে। মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক ও জনগণকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিউইয়র্কভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৬৭টি ডলফিন ও তিমি মারা গেছে। এর মধ্য ৬১টি ডলফিন ও ছয়টি তিমি। চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, খুলনায় ১০টি, ঢাকায় তিনটি এবং ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে একটি করে ডলফিন ও তিমি মারা গেছে। এগুলোর ৮৩ শতাংশ জালে আটকা পড়ে এবং ১৭ শতাংশ ট্রলার ও জাহাজের সঙ্গে আঘাত লেগে মারা গেছে। জালের মধ্যে ৭৮ শতাংশই মারা গেছে ফাঁস জালে আটকা পড়ে। কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকতে ১৬টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। এ অবস্থায় আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রাণী দিবস। আজ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।

২০০৩ সালে ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি ও বাংলাদেশ কেটাসিয়ান ডাইভারসিটি প্রজেক্ট বাংলাদেশের পানিসম্পদ গবেষণা করতে গিয়ে উপকূলবর্তী এবং মোহনা এলাকায় পাঁচ হাজার ৮৩২টি ইরাবতী ডলফিন থাকার কথা বলেছিল। গবেষণায় উঠে এসেছিল, এ দেশের জেলেরা মাছ ধরার কাজে লম্বা জাল ব্যবহার করেন। এসব জালে প্রায়ই ডলফিন আটকা পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায় সেগুলো।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের তিনটি নদীর ৪৭ কিলোমিটার নৌপথকে ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্তর প্রান্ত ঘিরে এক হাজার ৭৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ডলফিন, তিমি, কচ্ছপ, হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ সংরক্ষণের জন্য ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ (এমপিএ) ঘোষণা করে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৭টি ডলফিন ও তিমি মারা গেলেও ৪৯টির মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। ১৫টি মাছ ধরার জাল ও ৩টি জ্বালানি তেলের দূষণে মারা গেছে।

কক্সবাজার উপকূলে জীববৈচিত্র্য নিয়ে তৎপর পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশে’র হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের আগস্ট- এই এক বছরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ টেকনাফ, উখিয়া, মাতারবাড়ী, কুতুবদিয়া উপজেলা ও সেন্টমার্টিনের সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন অংশ থেকে মোট ২৫টি ডলফিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলোর বেশির ভাগের গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ অ্যাকটিভিটির গবেষণা সহযোগী সাগরিকা স্মৃতি বলেন, সমুদ্রে যে পরিমাণ ডলফিন মারা যাচ্ছে, তার সামান্যই আমাদের চোখে পড়ে। ৭১০ কিলোমিটার উপকূলের মাত্র ১০ কিলোমিটারের তথ্যই যদি এমন ভয়ানক হয়, তবে পুরো উপকূলে কোন পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, আইন অনুযায়ী সাগরের প্রটেক্টেড এরিয়াগুলো দেখভালের মতো লোকবল এবং অবকাঠামো নেই, ব্যবস্থাপনায়ও আছে দুর্বলতা।

ডব্লিউসিএসের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডলফিন ও তিমির মৃত্যুর কারণ জানতে একটি গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ সেল তৈরি করা উচিত। বন অধিদপ্তরের ফরেনসিক ল্যাবরেটরি আছে। সেখানে মৃত্যুর কারণ জানতে ডলফিন ও তিমির জৈব নমুনা বা টিস্যু নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। প্রাণী মারা গেলেই প্রাথমিকভাবে লোক পাঠিয়ে তার গায়ে কোনো ক্ষতচিহ্ন আছে কিনা, তা দেখা উচিত।

তিনি বলেন, সাগরে বন অধিদপ্তর কিংবা মৎস্য অধিদপ্তরের কোনো টহল কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা নেই।

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved