(পর্ব-১)
মো. নাজমুচ্ছাকিব
বারো বছরের নেকি পাব প্রতিদিন। মাগরিব পড়ে পড়লে আওয়াবিন। রাসূল (সা.) এর হাদিসের সার নির্যাস থেকে কবি সঠিক কথা বলেছেন। সালাতুল আওয়াবিন আমাদের জন্য অনেক ফজিলতপূর্ণ। মাগরিবের নামাজ পড়ে দুই রাকায়াত করে ছয় রাকাত নামাজ পড়তে হয়। যার নাম সালাতুল আওয়াবিন।
আজ আমরা সালাতুল আওয়াবিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। আওয়াবিনের নামাজ যা মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাত এর পরে পড়া হয়। আওয়াবিনের নামাজ পড়া নফল। মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের জন্য অধিক নফল ইবাদত করতে হবে।
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘হে নবী আপনি রাতের কিছু অংশ ইবাদত করুন।’ (সূরা মুজাম্মিল) আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়বে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর প্রতিষ্ঠিত করবেন অর্থাৎ সে বেহেশতে যাবে।- [তিরমিযী শরীফ, ১/৯৮]
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে, এসবের মাঝখানে কথাবার্তা বলবে না, আল্লাহ্ তা’আলা তার ১২ বছরের নফল ইবাদত করার সওয়াব দান করবেন।- [তিরমিযী শরীফ ১/৯৮]
হযরত আম্মার বিন ইয়াসীন (রাজি.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত আওয়াবিনের নামাজ পড়বে, তার গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তার গোনাহ সাগরের ফেনাতুল্যও হয়।- [ইবনে মাজাহ, ১/৮১]
উপরের আলোচিত তিনটি হাদিস থেকে আমরা সালাতুল আওয়াবিন এর ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমরা যদি আরও হাদিসের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে জানতে পারব যে, হযরত হুযাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.) এর কাছে এসে তার সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের পরে ইশার সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন।’ [সহীহ হাদিস- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, নাসাঈ, সুনানুল কুবরা]
তাফাক্কুহ এবং আকলে সালীম না থাকার কারণে তাহকীককে তার নতিজার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নতিজার বাইরে ব্যবহার করা হয়। এটাই হলো তাহকীকের বদহজম। যখনই তাহকীকের বদহজম হবে তখনই ফেতনা হবে। আসুন, বাদ মাগরিবের নফল নামায প্রসঙ্গে। সাধারণ পরিভাষায় যা আওয়াবিনের নামাজ হিসেবে প্রসিদ্ধ। একবার কেউ রীতিমতো ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছিল।
তার বক্তব্য, সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, সালাতুদ দুহা (চাশতের নামায) হলো আওয়াবিনের নামাজ। সুতরাং মাগরিবের পরের নফল নামাজকে আওয়াবিনের নামাজ বলা ভুল। এবং এই নামাজের কোনো ভিত্তি নেই। সে বলেছিল, তিরমিযী শরীফে মাগরিবের পর ছয় রাকাত নফল পড়ার ফজিলত সম্বলিত যে রেওয়ায়েতটি আছে তাতে ইমাম তিরমিযী (রাহ.) নিজেই একথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এখানে ওমর ইবনে আবী খাছআম নামে একজন আছেন, যার ব্যাপারে ইমাম বুখারী (রাহ.) বলেছেন, ‘মুনকারুল হাদীস’।
তাছাড়া ইমাম যাহাবী (রাহ.) ‘মীযানুল ইতিদাল’ কিতাবে সরাসরি এই রেওয়ায়েতটিকেই ‘মুনকার’ বলেছেন। অতএব তার দাবি আওয়াবিন পড়া ছেড়ে দাও। এবং অন্যকেও তা থেকে বারণ কর। নাউজুবিল্লাহ! যে লোক বিষয়টিকে এভাবে নেবে নিঃসন্দেহে অজ্ঞতায় নিপতিত রয়েছে। এখানে তো শুধু তাহকীকের গলদ ব্যবহার নয়; বরং এখানে তাহকীকই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। আর তাহকীক না করার চেয়ে অসম্পূর্ণ তাহকীক করা বেশি খতরনাক, বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
মো. নাজমুচ্ছাকিব
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।