ঢাকা : দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন এবং যেসকল পেশাজীবি সংগঠন রয়েছে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসুন এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। এতে কোন দ্বিমত নেই এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, আসুন আজকে দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যের মধ্য দিয়ে দুর্বার একটা গণআন্দোলন সৃষ্টি করি। সেই গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকার যারা বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদের সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করি। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফারহাদ এর ২য় শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এর আয়োজনে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আবরার হত্যার পরে সেদিন যারা সোচ্চার হয়েছিল সে তরুণ সমাজের আজকে কোনো কর্মসূচি দেখতে পাচ্ছি না। পরিবর্তন আসে সবসময় তরুণ এবং যুবকদের মাধ্যমে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলাদেশে সেই তরুণ-যুবকদেরকে আমরা সামনে দেখতে পাচ্ছিনা।
আবরার হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আবরারা হত্যা এ দেশের যে সামগ্রিক সংকট সেই সংকটের একটা প্রতিচ্ছবি। বহু আবরার হত্যা হয়েছে এবং আমরা সকলেই জানি আমাদের পাঁচ শতের অধিক নেতাকর্মীদের গুম করে ফেলা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে এর কোনোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারি আধিপত্যবাদী চক্রান্ত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এই সরকার আধিপত্যবাদের তাবেদারী করছেন এবং একটি পুতুল সরকারে তারা পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার শুধু আজকে নয় তারা ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত একটি তাবেদারী সরকারের ভূমিকা পালন করেছে এবং বাংলাদেশকে তারা একটি তাবেদারী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলো। আজকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুকৌশলে গণতন্ত্রের একটি মোরগ লাগিয়ে একই কায়দায় সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল এবং তাঁবেদারি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ চিরকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে যুগ যুগ ধরে। আমি বিশ্বাস করি কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে এভাবে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে এবং জনগণের কাছে তাদেরকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই সরকারের কীর্তি কলাপ বর্ণনা করে আপনাদের সময় নষ্ট করতে চাইনা। বলার কোনো জায়গা নেই এই সরকার কয়েক বছরে বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এর কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই, এর কোথাও কোনো ন্যায় বিচার নেই। কোন মানুষের জীবন এবং জীবিকার কোন কিছু তারা অবশিষ্ট রাখেনি।
সাংবাদিক কনক সরওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনে সে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে সে কিছু সত্য কথা তার চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফরকে কেন্দ্র করে প্রতিবেদনটি সে প্রকাশ করে সেজন্য এই ভয়াবহ প্রতিহিংসা পরায়ন এই সরকার তার (কনোক সরোয়ার) বোনকে গ্রেফতার করেছে। তিনি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়, তিনি একজন গৃহবধূ। শুধু গ্রেফতারই করেনি নির্যাতন করেছে তাকে রিমান্ডে পর্যন্ত নিয়েছে। কতটা ফ্যাসিবাদী হলে কতটা স্বৈরাচারী হলে কতটা নির্যাতনকারী হলে এই ধরনের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা যায়। আজকে সাংবাদিকের বোনের ওপর নির্যাতন হয়েছে, ক’দিন আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন হয়েছে, এরকম আমাদের কত নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মা বোনদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এটা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না।
ফখরুল বলেন, বক্তব্য বেশি দেওয়ার সময় নয়, এখন কাজের সময়। আমি বারবার বলেছি এই সংকট শুধু বিএনপি নয়, এটা হচ্ছে সমগ্র জাতির সংকট। এই সংকটকে উদ্ধার করতে হলে আজকে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একা বিএনপি এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়ে নি, পুরো জাতি পড়েছে। সেই ক্ষেত্রে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে।
প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেড এম ডা. জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ প্রমুখ।