ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আজকে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল, তখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের আনন্দে আটখানা হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদের সর্তক হতে হবে, মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা যখন সফলতা অর্জন করে, তখন ষড়যন্ত্র জোরদার হয়।
শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে সারুলিয়া বাজার সংলগ্ন মাঠে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা,দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে খবার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডেমরা থানা আওয়ামী লীগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নানক বলেন, গতকাল মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে হটিয়ে দিতে হবে, আওয়ামী লীগকে অপসারণ করতে হবে’। আমরা জানি আপনারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙেচুরে গুড়িয়ে দিতে হবে। সেটাই আজকের প্রত্যাশা-প্রত্যয়। সকল ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল একমাত্র দলের শক্তিই পারে ভেঙে চুরমার করে দিতে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সর্তক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলকে আদর্শবাদী দলে পরিণত করতে হবে। আদর্শহীন কোনও মানুষ দলের দুঃসময়ে থাকে না।
‘বিএনপি অন্যায়, হত্যা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের এ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ কথা শুনে মরা মানুষ হাসবে, ঘোড়া হাসবে। তাহলে ২১ আগস্ট ঘটলো কেন? কেন গ্রেনেট হামলা চালানো হলো? কেন আমার নেত্রী শেখ হাসিনার ওপরে পাকিস্তানের আর্জেস গ্রেনেট হামলা করা হলো? ২৪ জন মানুষ নিহত হলো, ৫ শতাধিকের উপরে মানুষ আহত হলো। কারা করলো? আপনারা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া, মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা পুত্র তারেক রহমান সেদিন হামলা পরিচালনা করেছিলো। শেখ হাসিনাকে দুনিয়ায় থেকে সরিয়ে দিয়ে তারা রামরাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিলো। ২০০৮ সালে জনগণ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তখন এই ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে কারা মেরে ছিলো মির্জা ফখরুল সাহেব?
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট কেন ঘটলো, সে বিষয়টি খুঁজতে গেলে ৭১ খুঁজতে হবে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ৭১ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, আমরা যখন শক্তিশালী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম, সেই মূহুর্তে স্বাধীন বাংলা সরকারের ভিতরে এক বিভাজনের সৃষ্টি হলো। খুনি মোস্তাক বাংলার স্বাধীনতা চায়নি। মুজিববিহীন বাংলাদেশকে কনফেডারেশনে পরিণত করতে চেয়েছিলো। আর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে, এজেন্ট হিসেবে সেদিনের মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধকে বাঁধাগ্রস্থ করতে চেয়েছে, দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, যারা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক-চীন-মার্কিন শক্তি আমার দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। ৭তম নৌবহর পাঠিয়ে দিয়ে আমার মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলো। এরা পরাজয় মেনে নিতে চায় নাই। ৭১ এর পরাজিত শক্তি জামাত, রাজাকার, আলবদর, আল শামস পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঢুকে পরেছিলো। এই অপশক্তিকে যারা আশ্রয়-প্রশয় দিয়েছিলো, তারা দলের জন্য শুভ কাজ করেনি।
৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমাদের জন্য এক শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকে আমাদের নতুনভাবে দল গোছাতে হবে, দলকে পুর্নগঠন করতে হবে। আজকে যদি কোনও নেতা যুবদল, ছাত্রদল, জামাত-শিবির অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢুকায় সে এই দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না বলেও যোগ করেন সাবেক যুবলীগের চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলী ও ৬৮,৬৯ ও ৭০নং ওয়ার্ড কাউন্সিরর মাহমুদুল হাসান পলিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। অনুষ্ঠান শেষে ১৫ আগস্ট ও ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত সকল শহীদদের স্মরণে দোয়া করা হয়।