বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ঢাকা ঢুকতে দেয়া হবে না দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নুর তাপসের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘তাপসের বক্তব্য পাড়া মহল্লার সন্ত্রাসীদের মতো। শেখ পরিবারের ভাষাই হচ্ছে গুন্ডাদের মতো। তাদের কথায় মনে হয় আমরা প্রজা আর তারা জমিদার।’
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের অভাবে দেশে চলছে এক মানবতাহীন অন্ধকার যুগ। দেশকে ফ্যাসিজমের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে এক ব্যক্তি, এক দলের দুঃশাসনে গণতন্ত্রকামী মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে নামিয়ে আনা হয়েছে। গণতান্তিক বিশ্ব থেকে শেখ হাসিনার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন পৃথিবীর সকল স্বৈরশাসকের সাথে শেখ হাসিনার পারস্পরিক প্রীতির সম্পর্ক।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, ভিন্ন মত, বিরোধী কণ্ঠস্বর এখন শেখ হাসিনার শত্রুপক্ষ বলেই অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসকদের সাথে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মাখামাখি। তাই আওয়ামী লীগের মতো একটি দল তাদের অধীনে এমন কোন নির্বাচন হতে দেবে না, যেখানে তাদের পরাজয় হয়। সুতরাং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটাধিকার প্রয়োগই একমাত্র পূর্বশর্ত।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বলেছেন, ‘ছেলের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে করবে, তাতে কিছু আসে যায় না’। তাহলে প্রধানমন্ত্রী ছেলের সম্পদের কথা স্বীকার করলেন। বাজেয়াপ্ত সম্পদ ও অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করলে জনগণ বুঝতে পারতো আসল ঘটনাটা কি। আমেরিকার নিজেদের সুশাসন ও স্বাধীন বিচার বিভাগ নিয়ে তাদের বিপক্ষরাও কখনো প্রশ্ন তোলেনি। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের বিকাশ সাধন করেছে। সেই দেশের সরকার ইচ্ছা করলেও কারও ন্যায়সঙ্গত সম্পদ, বাড়িঘর বা অর্থকড়ি বাজেয়াপ্ত করতে পারে না।
‘শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ দেশের লক্ষ কোটি টাকা পাচারের আরও অনেক লুকায়িত ঘটনার আভাস পাওয়া যায়। যাদের আমলে সরকারি ট্রেজারি থেকে শুরু করে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়, সেই দেশের লুটেরা গোষ্ঠী ক্ষমতাকে গায়ের জোরে আঁকড়ে ধরে রাখবে এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত সময় মাত্র এক ঘণ্টা। এতে বক্তব্য দেয়ার জন্য একটা হতদরিদ্র দেশের ভুখা-নাঙ্গা মানুষগুলোর খাবারের পয়সায় ১৬৭ জনের বিশাল বহর নিয়ে ১৮ দিনের লম্বা সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতেই প্রমাণিত হয় শেখ হাসিনার উন্নয়নের বুলি দিয়ে মানুষকে ফতুর করার উন্নয়ন। সেটি বুঝতে বা অনুধাবন করতে বেশি জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্রে তার এই এক ঘণ্টার কর্মসূচির বাইরে আর কোন কর্মসূচি আছে বলে কোন সূত্র থেকেই পাওয়া যায়নি। গরিব মানুষের টাকা নয়ছয় করতে প্রধানমন্ত্রীর একটুও বিবেকে বাঁধে না।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা মরণকামড় দেয়ার জন্য নানাবিধ নিপীড়ণের যন্ত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষের ওপর নামিয়ে এনেছেন। দেশব্যাপী চলছে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতারের হিড়িক, হামলা ও ভাঙচুরের অব্যাহত নিষ্ঠুর ঘটনা। তিনি মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে সংকটাপন্ন করেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জবাবদিহিতার বিষয়গুলো উপেক্ষা করে ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের আচরণ করছেন বলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, আদালত, বিচারক সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর তল্পিবাহকে পরিণত করা হয়েছে।
‘‘বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আদালতে সাজানো সাক্ষীর মুখে শেখানো বুলি শিখিয়ে এবং দীর্ঘক্ষণ আটকিয়ে রেখে কক্ষে কক্ষে কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আদলে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে। জার্মানীর নাৎসী নেতা হিটলারের সহযোগী গোয়েরিং ঘোষণা করেছিলেন ‘হিটলারই হলো আইন’। এখন শেখ হাসিনার তল্পিবাহকরা মনে করছেন শেখ হাসিনাই হলো আইন।”
রিজভী বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে আদালত প্রাঙ্গনে ফ্যাসিবাদের নমুনা ফুটে উঠতে শুরু করেছে। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেফতার করে প্রায় ৫ মাস ধরে হয়রানি করা হচ্ছে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে। গতকাল তাকে বাকশালী আদালত একটি সাজানো মিথ্যা মামলায় তিন বছরের সাজা দিয়েছে। অথচ সেই মামলায় এফআইআর-এ তার কোন নাম ছিলনা, তাছাড়া বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। দেশ থেকে বিরোধী দলের তালিকা মুছে দেয়ার জন্যই এখন সারাদেশব্যাপী আজ্ঞাবাহী আদালত দিয়ে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া শুরু হয়েছে। আমি এই সাজার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি।
তিনি বলেন, শুধু পুলিশ ও আইন আদালত দিয়েই নয়, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়ে বিরোধী দলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সেবামূলক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার লিমিটেডে’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালিকের নির্দেশে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সুনামের সাথে বনানীতে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এই দীর্ঘ সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কেউ অনিয়মের অভিযোগ তুলতে পারেনি। স্বল্প খরচে আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সুনাম অর্জন করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে শুধুমাত্র দখলের উদ্দেশ্যেই কোন প্রকার কারণ দর্শাণো ব্যতিরেকেই প্রতিষ্ঠানটি তালা মেরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আমিরুল ইসলাম আলিম প্রমুখ।