ঢাকা: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ছড়ানো ভুয়া চেক ও এডিট করা চেকের প্রকৃত ছবি। ছবি : সংগৃহীত
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ছড়ানো ভুয়া চেক ও এডিট করা চেকের প্রকৃত ছবি। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সস্ত্রীক চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুরে গেছেন কয়েক দিন হলো। এরই মধ্যে তিনি প্রধামন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তিনি অর্থ সহায়তা নিয়ে চিকিৎসা করাতে গেছেন দাবি করা একটি চেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও দল ও মির্জা ফখরুল ইসলামের পক্ষ থেকে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করা হয়।
ভাইরাল ওই চেক নিয়ে নানা শ্রেণিপেশার মানুষজনও তাদের ব্যক্তিগত মতামত জানিয়ে কেউবা মিম শেয়ার করেছেন ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে। তবে ফ্যাকচেকিং রিউমার স্ক্যানার ছবিটিকে ফেক দাবি করে। সেটাও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এসবের মধ্যে মির্জা ফখরুলের চেক নিয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে মতামত শেয়ার করেছেন কবি, গল্পকার ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষক এবং সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজের (এসকিউএস) গবেষক সুমন রহমান।
পাঠকদের জন্য মির্জা ফখরুলকে নিয়ে তার লেখা তুলে ধরা হলো।
যে চেক এডিট করে বানানো হয় মির্জা ফখরুলের ভুয়া চেক
‘মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া চেকের ছবিটা গতকালই আমাদের নজরে এসেছে। তাৎক্ষণিকভাবেই চেকের মধ্যে দু-একটা অসংগতি পাওয়া গেছে। কিন্তু তার ভিত্তিতে আমরা হাফ-বেকর্ড জাজমেন্ট দিতে চাইনি। ফ্যাক্টচেকিং একটা পরিশ্রমসাধ্য ডিটেইলড কাজ, ‘ফ্যাক্টচেকিং অন দ্য গো’ বলে কিছু নাই। ভাইরালিটি আর অ্যাটেনশন সিকিং ফ্যাক্টচেকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। যে কোনো দুর্বল জাজমেন্ট প্রকারান্তরে ফেক নিউজকেই ফিড করে। ফলে আমরা আজ পর্যন্ত সবুর করলাম।’
সবুরে মেওয়া ফলে। আমাদের ফ্যাক্টচেকাররা এই চেকের ছবিটিকে ভুয়া বলে রায় দিয়েছে নিম্নোক্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে:
এক। চেকের গায়ে লেখা রাউটিং নম্বর এবং অ্যাকাউন্ট নম্বর দু’জায়গায় দুই রকম করে লেখা আছে। যেটা কোনোভাবেই একটা চেকে থাকার কথা না।
দুই। সোনালী ব্যাংকের‘তেজগাঁও শাখা’ বলে কোনো ব্রাঞ্চ নাই। আছে TEJGAON INDUSTRIAL BRANCH.
তিন। PM’s Relief Fund বলে কোনো অ্যাকাউন্ট ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী থাকতে পারে না, কারণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নামে ঊর্ধ্বকমা অনুমোদন করে না।
চার। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া চেকের ছবি অনেক সময় অনলাইনে পাওয়া যায়। তেমন একটি চেক থেকে জানা গেছে, ওই তহবিলের নাম PRODHAN MONTRIR TRAN O KALYAN TAHABIL এবং এটি সোনালী ব্যাংকের PRIME MINISTER’S OFFICE CORPORATE, DHAKA শাখায় খোলা হয়েছে, যার অ্যাকাউন্ট নাম্বার 0107333004093 এবং এই শাখার রাউটিং নাম্বার 200263739 । এর সঙ্গে ভাইরাল চেকের অ্যাকাউন্ট নেম, নাম্বার ইত্যাদির কোনোই মিল নেই।
পাঁচ। সর্বোপরি, কোনো ইমেজকে ভুয়া বলে মনে হলে এর সোর্সিং করা জরুরি। আমাদের ফ্যাক্টচেকাররা এই চেকের ছবিকে সোর্সিং করতে পেরেছে অনলাইনে। এটি আদতে ছিল আইনজীবী প্রণোদনা তহবিল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে দেওয়া একটি অর্থসহায়তার চেক। চেকের গায়ে থাকা অ্যাকাউন্ট নম্বর রাউটিং নম্বর ইত্যাদির সঙ্গে ভাইরাল চেকের নম্বরগুলো মিলে যায়। এমনকি চেকদাতার স্বাক্ষরগুলোও হুবহু মিলে যায়। ছয়। গুজবের কফিনে শেষ পেরেক: মির্জা ফখরুল নিজেই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ রকম সহায়তা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
এটাই হলো ফ্যাক্টচেকিং জাজমেন্ট। সাইনড, সিলড, অ্যান্ড ডেলিভারড। বিস্তারিত পড়ার জন্য কমেন্টে ফ্যাক্টওয়াচ প্রতিবেদনের লিংক দেওয়া থাকল।কা:বে: