শিরোনাম :
বিএনপি এখন সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে: হানিফ সূচকের সাথে বেড়েছে লেনেদেন অবরোধ সফলে কমলাপুরে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল বিএনপিকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন কাদেরের সিরাজগঞ্জে যুবদলের ৩ নেতা গ্রেফতার তিন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ কার্যকর রুশ-ভারতের সাহায্য নিয়েও সরকারের পতন ঠেকানো যাবেনা বিএনপির আরও দুই নেতাকে বহিষ্কার ঋণ আমানতের সুদের ব্যবধান তুলে নিল বাংলাদেশ ব্যাংক আদালত চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইইউর কারিগরি প্রতিনিধি দল ঢাকায় ক্রাচে ভর করে মিছিলে যুবদল নেতা রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৪ বায়ুদূষণে আজ শীর্ষ চারে ঢাকা শ্যামলের নেতৃত্বে রামপুরায় সড়ক অবরোধ ও মিছিল

ভুয়া কাগজে রাজউকের জমি বিক্রি, হাতিয়েছে ৮৪ কোটি

  • বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ঢাকা: জমি অন্যের। কিন্তু ভুয়া মালিক সাজিয়ে ৭৩ শতক জমি বিক্রি করা হয়েছিল। জমি বিক্রির সময়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্পোরেশনের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ভুয়া সিল, স্বাক্ষর, জমির দলিল এবং ব্যাংকের যাবতীয় কাগজপত্র বানিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা।

জমিগুলো কয়েক বছর আগে বিক্রি করা হয়েছিল। দখলও বুঝিয়ে দেয়া হয় ক্রেতাকে। কিন্তু তা শুধু ছিল লোক দেখানো। সম্প্রতি জমিগুলোর ক্রেতারা দেখতে পান তাদের জমিতে অন্য কেউ দেয়াল তুলছে। বিষয়টি সন্দেহ হলে তারা খোঁজ নিতে শুরু করেন রাজউক ভবনে। ‌এরপর আসতে শুরু করে ভয়ংকর প্রতারণার তথ্য।

খোঁজ নিয়ে জমির মালিকরা জানতে পারেন, তাদের কাছে বিক্রি করা জমির মালিক অন্য ব্যক্তিরা। শুধু তাই নয়, জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রও জাল। পরে তারা বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন। ‌

এমন ঘটনা খোদ রাজধানীতে। আর জমিগুলো বিক্রি করা হয়েছিল পূর্বাচল এলাকার ১০টি প্লট দেখিয়ে। ১০ প্লটে বিক্রি করা হয়েছিল ৭৩ শতক জমি। ‌যার পুরোটাই ছিল অন্য ব্যক্তিদের। কিন্তু জমিগুলো বিক্রির সময় ভুয়া ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে এমন কাজ করা হয়।

এ ঘটনার পর মামলা হলে সিটিটিসির ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম ও হিউম্যান ট্রাফিকিং বিভাগ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন- ‌‌‌‌‌‌‌ চক্রটির মাস্টারমাইন্ড মুক্তা আক্তার ও তার গাড়ি চালক তুষার মিয়া। সোমবার অভিযান চালিয়ে রাজধানী থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটিটিসির ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম ও হিউম্যান ট্রাফিকিং বিভাগের এডিসি তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, তারা মূলত কোন পেশার সাথে জড়িত নন। কিন্তু ভুয়া প্লট মালিক ও রেজিস্টার সাজিয়ে রাজউকের প্লট বিক্রি করতো। ‌‌ চক্রটি এভাবে জমি বিক্রি করতে গিয়ে শেষমেশ ধরা পড়েছে। তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাকিদেরও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। ‌

তিনি আরও জানিয়েছেন, চক্রটি ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে রাজউকের ৪৮ শতক জমি বিক্রি করে ইয়ুথ গ্রুপের কাছ থেকে হাতিয়েছে ১৪ কোটি টাকা। তারা এই ঘটনায় কাফরুল থানা একটি মামলা করেছেন। ‌মামলায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ উল্লেখ করেছেন। ‌

তিনি বলেন, আদতে তারা আপাদমস্তক প্রতারক। ভুয়া রেজিস্টার ও ফ্ল্যাট এর মালিক সেজে রাজধানী উন্নয়ন কর্পোরেশনের বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বরাদ্দকৃত প্লট বিক্রয় করতো। তাদের কাছে সেই জমি ক্রয় করে করেছিল ইয়ুথ গ্রুপ নামে একটি কোম্পানি। সেই কোম্পানির সকলের চোখের ধুলো দিয়ে রাজউকের বরাদ্দকৃত প্লট থেকে সেই কোম্পানির কাছে ৪৮ কাঠা জমি বিক্রি করে ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি ঘূর্ণাক্ষরেও ধরতে পারেনি কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু পরে কাগজ যাচাই বাছাই করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে প্রতারণার ভয়ংকর গল্প। সেই মামলায় তুষার ও মুক্তাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‌‌‌‌‌

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র বানিয়ে ৪৮ শতক জমি বিক্রি করে ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে ৭৩ শতক জমি বাবদ ৮৪ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। যার পুরোটাই পরিশোধ করা হয়েছিল।

ভুক্তভোগী ইয়ুথ গ্রুপের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমরা মূলত গ্রেফতারকৃত মুক্তার স্বামী মোবারকের মাধ্যমে ৬ থেকে ৭ বছর ধরে পূর্বাচল এলাকায় জমি কিনে আসছিলাম। মোবারক আমাদের বিভিন্ন সময়ে ৭৩ শতক জমি বিক্রি করেছে। এছাড়াও সে আমাদের আসল কিছু জমি দিয়েছিল। ফলে সে থেকে তার ওপর আমাদের বিশ্বাস জাগে। ৭৩ শতক জমি আজ থেকে ৬ থেকে ৭ বছর আগে কিনে রাখা হয়েছিল। তাকে ৮৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। মোবারক এই জমির মালিক নয় তবে দালাল হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির জমি আমাদের কাছে বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছিল। জমি বিক্রি বাবদ তাকে কমিশন দেওয়া হয়েছে।

যেভাবে বেরিয়ে এলো প্রতারণার ভয়ঙ্কর তথ্য
গ্রুপটির একজন পরিচালক জানান, পূর্বাচল এলাকায় বিভিন্ন সময়ে জমির দালাল ও প্রতারক মোবারকের কাছ থেকে কেনা জমিগুলোর একটিতে দেয়াল তোলা হচ্ছিল। গত কয়েক মাস আগে তারা এমন খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান। এরপর বিষয়টি মোবারককে ফোনে জানান তারা। মোবারক ওই সময় দুবাইয়ে ছিলেন। ফোনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বলেন, হয়তো কেউ ভুলক্রমে তাদের জমিতে ওয়াল তুলছেন। তিনি বাংলাদেশে আসলে বিষয়টি দেখবেন এবং সমাধান করে দেবেন। কিন্তু মোবারকের কথায় তাদের সন্দেহ হয়। তারা মোবারকের কাছ থেকে ৭৩ শতক জমি বাবদ পাওয়া কাগজপত্র গুলো নিয়ে ছুটে যান রাজউক কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তাদের চোখ ছানাবড়া। ‌‌‌‌‌‌‌‌

রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের জানায় জমি বিক্রির নামে যে দলিল ও ব্যাংকের কাগজপত্র দেয়া হয়েছে সবটাই ভুয়া। শুধু তাই নয়, রাজউকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পরিচালকের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে এই জমি বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য ব্যক্তিকে সাব-রেজিস্টার সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল। এরপর বাকি জমির কাগজপত্রগুলো যাচাই করতে গিয়ে একই দৃশ্য ধরা পড়ে। বিষয়টি মোবারককে জানালে সে দুবাই থেকে দেশে এসে স্বামী স্ত্রী গা ঢাকা দেয়। ‌ তাদের কোন খোঁজ না পেয়ে অবশেষে তারা মামলা করতে বাধ্য হন।

তিনি আরও জানান, মোবারক দম্পতি অন্যের জমি বিক্রি করে অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন। নারায়ণগঞ্জের ইছাপুর এলাকায় ১০ কাঠা জমিতে ৬ তলা বাড়ির কাজ চলছে তাদের। তাদের কোন আয়ের উৎস নেই। ‌ অন্যের জমি বিক্রির দালালি করে তারা আজ কোটিপতি।

তিনি বলেন, মোবারক জমির দালাল হলেও চক্রটির মাস্টারমাইন্ড তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার। তাদের সাথে আরও লোকজন রয়েছে। তাছাড়া এত বড় প্রতারণা করা সম্ভব না। এই চক্রের সাথে জমি রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা এবং রাজউকের কর্মকর্তারা ছাড়াও আরও অনেকে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিলে পুরো চক্রটির ব্যাপারে তথ্য বেরিয়ে আসবে।

গরিব থেকে কোটিপতি
মোবারক ও মুক্তা তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু তাদের পুরো পরিবার জমির দালালি করে চলে। তারা একসময় গরিব ছিল। গত ছয় সাত বছরে শুধু জমির দালালি করে আজ তারা কোটিপতি। তাদের গ্রামের বাড়িতে ঘর বাড়িগুলোতে এখনো গরিবি ছাপ স্পষ্ট। তারা অন্যের জমি বিক্রি করে গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত তুষার তাদের গাড়ি চালক। জমির দালাল মোবারক অন্যের জমি বিক্রি করে বিভিন্ন সময় হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকশো টাকা কোটি টাকা। মোবারক বেশিভাগ সময়ে ভারত দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে যান।

এই গ্রুপটির সঙ্গে প্রতারণার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আরও তথ্য। ভুক্তভোগীরা জানতে পেরেছেন তাদের মত আরও অনেক ব্যক্তির সাথে এমন প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতে নিয়েছে মোবারক দম্পতি। চক্রটির সদস্য মোবারক হোসেন এলাকায় কোটিপতি বলে পরিচিত। কিন্তু অন্যের জমি প্রতারণা করে বিক্রি করে সে যে কোটিপতি বিষয়টি অনেকের কাছে অজানা।

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved