ঢাকা : গেলো রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি যুবক মো. আবুল বাশারকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সৌদি আরবের আদালত। তার অপরাধ- দেশটিতে প্রবেশের সময় তার ব্যাগে ইয়াবা পাওয়া গেছে।
যদিও বরিশালের এই যুবকের ব্যাগে ‘আচারের প্যাকট’ বলে ইয়াবা ভর্তি ওই প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেন বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ।
এক মাসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ থাকলেও দূতবাসের মাধ্যমে আইনি সতায়তা না পেলে কারাভোগ করতে হবে আবুল বাশারকে। ‘নিদোর্ষ স্বামী’কে কারামুক্ত করতে বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের সহায়তা চান আবুল বাশারের স্ত্রী রাবেয়া।
রাবেয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার স্বামী অপরাধ করেনি, তারপরও তার জেল হয়ে গেলে। তার পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিল না, দূতাবাসের মাধ্যমে কোনও সহায়তা পাওয়া যায়নি। এখন সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে কীভাবে ছাড়িয়ে আনবো। আপিল করার এক মাস সময় আছে, এখন সরকারে যদি উদ্যোগ নেয় তাহলেই কেবল আমার স্বামীকে ফিরে পাবো। স্বামী জেলে, এদিকে পাঁচ বছর বয়সী এক মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে আমি হিমশিম খাচ্ছি। আমার স্বামী অপরাধ না করেও কেন জেল খাটবে?’
যেভাবে ফাঁদে পড়লেন আবুল বাশার
করোনা মহামারিতে গেল বছর ১২ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন আবুল বাশার। ছুটি শেষে কাজে ফিরতে এ বছর মার্চের ১১ তারিখ আবুল বাশার সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সৌদি যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। ওইদিন দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ৪ নম্বর গেট দিয়ে বিমানবন্দরে ভেতরে প্রবেশ করেন।
বোর্ডিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়ালে তাকে এক ব্যক্তি একটি প্যাকেট সৌদিআরব নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। প্যাকেটে কিছু আচার ও খাবার আছে জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, সৌদিতে অবস্থানরত তার ভাই মো. সাইদ প্যাকেটটি বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করবেন।
তবে অপরিচিতি ব্যক্তির প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান বাশার। এক পর্যায়ে সেই ব্যক্তি নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আবুল বাশারকে ভয় ভীতি দেখানো শুরু করেন এবং এই প্যাকেট না নিলে তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলেও ভয় দেখান। তাতেও প্যাকটি নিতে রাজি না হলে এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেই জোর করে বাশারের ব্যাগে প্যাকটটি ঢুকিয় দেয়।
ভয়ভীতি দেখানো এবং ফ্লাইটের সময় হয়ে যাওয়ায় কারও কাছে কোনও অভিযোগ না দিয়ে আবুল বাশার ফ্লাইটে উঠে পড়েন। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর সেখানে নিরাপত্তা কর্মীরা তার ব্যাগ তল্লাশি করলে সেই প্যাকেট থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে। তারপর আবুল বাশারকে জেলে পাঠানো হয়।
যেভাবে পাওয়া গেল বাশারের খোঁজ
ফ্লাইটে ওঠার পর থেকে আবুল বাশারের খোঁজ পাচ্ছিল তার পরিবার। ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর সেখান থেকে ফোন করে স্ত্রী রাবেয়াকে জেলে যাওয়ার ঘটনা জানায় আবুল বাশার। তবে এর আগেই এমন একটা বিষয়ে আশঙ্কা করছিলেন তিনি। কারণ ব্যাখ্যা করে রাবেয়া বলেন, আমার স্বামী সৌদি যাওয়ার পরদিনই (১২ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমার ফোনে বাংলাদেশের একটি (018173591..) নম্বর থেকে ফোন আসে, জানতে চাওয়া হয় সৌদিতে তার স্বামী ব্যাগটি পৌঁছে দিয়েছে কি না। কিন্তু আমার স্বামীর সাথে কোনও যোগাযোগ ছিলো না। তিনি সৌদিতে গিয়েও যোগাযোগ না করায় আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। তখন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে জানিয়েছিলাম তার বিষয়ে খোঁজ পেতে। কিছুদিন পরে আমার স্বামী ফোন করে জানায়- সে জেলে এবং আমাকে বিমানবন্দরের ঘটনারও বিস্তারিত জানায়।
যেভাবে ধরা পড়লেন অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদ
স্বামীর কাছে এমন ঘটনা শোনার পর গত ১৩ এপ্রিল রাবেয়া বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশের অফিসে যেয়ে অভিযোগ দেন। এ অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। সেদিনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সত্যতা পায় বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়, যিনি বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতার কাছে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান একে ট্রেডার্সের এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ। ১৪ এপ্রিল দুপুরে নুর মোহাম্মদকে নুরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে নুর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এ ঘটনায় বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ একটি মামলা করে তাকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করে।
এ বিষয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, রাবেয়া নামের একজন নারী আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তার অভিযোগের ভিত্তিতে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। নুর মোহাম্মদ নামের ওই ব্যক্তি রাবেয়ার স্বামী আবুল বাশারকে ইয়াবা বহনে বাধ্য করেছিলেন। মামলা করে আসামি নুর মোহাম্মদকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জিয়াউল হক বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সৌদি আরবে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে।