ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের মহামারী করোনাভাইরাসের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠছে। প্রায় এক দশক ধরে চলা ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতা কাটিয়ে করোনার সুরক্ষাসামগ্রীর উৎপাদন ও রপ্তানি করে ব্যাপক মুনাফা করছে দেশের করপোরেট সংস্কৃতিতে নেতৃত্বে থাকা শিল্প গ্রুপটি। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের মুনাফা কয়েক গুণ বেড়েছে।
কভিডের টিকা আমদানি ও ওষুধ উৎপাদন করে গ্রুপটির আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসও ভালো মুনাফায় রয়েছে। মুনাফার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শেয়ার দরও। বলা যায়, বেক্সিমকোতে সুদিন ফিরিয়ে এনেছে মহামারী করোনাভাইরাস।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১০ সালের পর দীর্ঘদিন ধরে বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবসা প্রায় এক জায়গাতে আটকে ছিল। প্রতি ছয় মাসে পণ্য বিক্রি করে আয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঘরে সীমাবদ্ধ ছিল, যা ২০১৯ সালে আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। তবে ২০২০ সালে বিশ^ব্যাপী করোনা সংক্রমণের পর থেকে বেক্সিমকোর সৌভাগ্যের চাকা সচল হতে শুরু করে। করোনার সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। আর একই সময়ের ব্যবধানে নিট মুনাফা বেড়েছে ১৫ গুণ।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে দেশের উৎপাদনমুখী খাতের অধিকাংশ কোম্পানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও কিছু কোম্পানি বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যেও ভালো ব্যবসা করতে পেরেছে, যাদের মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড অন্যতম। সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কার্যকর পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন ব্যবসা খুঁজে পেয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড।
করোনাভাইরাসের প্রাথমিক সুরক্ষাসামগ্রী পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি রপ্তানির মাধ্যমে ব্যবসায় বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি এসেছে। পণ্য বিক্রি ও নিট মুনাফা বাড়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষাসামগ্রী রপ্তানি বড় ভূমিকা রেখেছে। এসব পণ্যের চাহিদা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আরও বাড়ছে। সম্প্রতি বেসরকারি খাতের প্রথম সুকুক বন্ড ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে বেক্সিমকো লিমিটেড।
বেক্সিমকো লিমিটেডের চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর,২১) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ে কোম্পানির রেভিনিউ হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২১ শতাংশ বেশি।
আগের বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির রেভিনিউ ছিল ১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের একই সময়ে পণ্য বিক্রি করে বেক্সিমকো লিমিটেডের আয় ছিল ৯৩২ কোটি টাকা। এদিকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে আয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেলেও কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কমেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে বেক্সিমকো লিমিটেডের উৎপাদন ব্যয় ছিল রেভিনিউর ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর চলতি প্রথমার্ধে কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় দাঁড়িয়েছে মোট রেভিনিউর ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশে। যদিও এ সময়ে কাঁচামাল ও জাহাজ ভাড়া বাড়ায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।
গতকাল প্রকাশিত বেক্সিমকো লিমিটেডের প্রথমার্ধের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, উৎপাদন ব্যয়ের পর মোট আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৩৮ কোটি টাকা। প্রশাসনিক, বিক্রি ও বিতরণ বাবদ ব্যয়ের পর পরিচালন আয় হয়েছে ১ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের একই সময়ে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩০০ কোটি টাকা।
চলতি প্রথমার্ধে বেক্সিমকো লিমিটেড ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় করেছে ২৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৬৯ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেক্সিমকো লিমিটেডের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৬৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫২ শতাংশ বেশি।
২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল ১৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর ২০১৯-২০ হিসাব বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।