ঢাকা: সারা পৃথিবীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনে এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গুম ও খুন এই দুটি শব্দ জনগণের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত হয়ে গেছে। গুম কি?বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কি? এটা এদেশের মানুষ জানতো না। এই আওয়ামী লীগ সরকার এ সংস্কৃতি চালু করেছে।’
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিকদলের আয়োজনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের ৮৬ জন গুমের তালিকা প্রকাশ করে বলেছে এদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। আর বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে দেশের অধিকাংশ গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সাথে ক্ষমতাসীনরা জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু সংগঠন বলেছে র্যাবের সাবেক অফিসার ও বর্তমান কিছু কর্মকর্তার বিচার করতে হবে এবং তাদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের কানে এটা যায় না। কানের মধ্যে যাবে কেন? যারা এটার পৃষ্ঠপোষক, যারা এই গুম-খুন কে জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ করেছে। তারাই তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, বিরোধীদলের কণ্ঠকে সংকুচিত করতে করতে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে এখন যদি কেউ এ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলে তাহলে তাদেরকে গুম ও খুন করা হয়। বিএনপি’র অনেক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। এছাড়াও যারা মানবাধিকার সংগঠনের সাথে জড়িত, অধিকার আদায়ের সাথে জড়িত তাদের অনেক কেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকেও গুম করার চেষ্টা করা হয়েছে।সারা পৃথিবীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনে এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবার কেয়ার হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। শুধু বিএনপি নয়, অনেক মানবাধিকার সংগঠন, অধিকার গ্রুপ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর সাথে দেখা করেছে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারা (সরকার) সবকিছু অগ্রাহ্য করেছে।
এ সময় রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমি নিন্দা জানাই ঘৃণা জানাই খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসা মনকে। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। অন্যথায় ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরুকে গুম করে মনে করেছেন পার পেয়ে গেছেন। জনিকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করে পার হয়ে গেছেন। অনেকেই বলে আল্লাহ তা’আলা বিপথগামী লোকদেরকে অনেক লম্বা দড়ি দিয়ে দেয়। আপনি মনে করেছেন একের পর এক পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু এইবার হয়তো আপনি আর পার পাবেন না। আপনাকে জনগণের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়তে হবে যদি বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হয়। আপনার নিস্তার নেই। আপনার শাস্তি পেতেই হবে।
তিনি বলেন, গত পরশুদিন প্রধান মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছে তা শুনে মনে হয়েছে তিনি জমিদার। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র নয় তিনি জমিদার। কে চিকিৎসা নিতে পারবে আর কে পারবে না এ সিদ্ধান্ত তিনি নিবেন। তার সিদ্ধান্ত ছাড়া কেউ চিকিৎসা নিতে পারবে না।
রিজভী আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাতের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হন নাই। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার কোনো চিকিৎসা নাই। তাকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই শেখ হাসিনার সরকর।
বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়াই একমাত্র ইচ্ছা হচ্ছে শেখ হাসিনার এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এই সরকার জনগণকে বন্দুকের নলের মুখে রেখেছে। নিজের জন্য নিরাপদ বেষ্টনী তৈরি করেছেন। জনগণের জন্য নয়। হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নিজেকে কোনরকম টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে। এইজন্য বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় করে, বিএনপিকে ভয় করে। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হলে যদি তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এই ভয় হচ্ছে তার হাসিনার। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়ার একমাত্র ইচ্ছা হচ্ছে হাসিনা র।
তিনি বলেন, আজকের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতার ঘোষক এর সহধর্মিনীর চিকিৎসা না দিয়ে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার কারণে হাসপাতালের বেডে ধুঁকেধুঁকে দিন কাটাতে হচ্ছে বেগম জিয়াকে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা চান তার কোনো প্রতিপক্ষ থাকবে না। কেউ তার সমালোচনা করতে পারবে না। যে সমালোচনা করবে তাকে যেভাবেই হোক পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। খালেদা জিয়া তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী তাই তাকে ক্রসফায়ার দিতে পারছে না। কিন্তু বেগম জিয়াকে তিলে তিলে নিঃশেষ করার মধ্য দিয়ে আরেক ধরনের ক্রসফায়ার এর মধ্যে নিয়ে এসেছে।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম,সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তাফিজুল করিম মোস্তাফিজ,প্রচার সম্পাদক মঞ্জুলরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।