শিরোনাম :
রুশ-ভারতের সাহায্য নিয়েও সরকারের পতন ঠেকানো যাবেনা বিএনপির আরও দুই নেতাকে বহিষ্কার ঋণ আমানতের সুদের ব্যবধান তুলে নিল বাংলাদেশ ব্যাংক আদালত চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইইউর কারিগরি প্রতিনিধি দল ঢাকায় ক্রাচে ভর করে মিছিলে যুবদল নেতা রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৪ বায়ুদূষণে আজ শীর্ষ চারে ঢাকা শ্যামলের নেতৃত্বে রামপুরায় সড়ক অবরোধ ও মিছিল গাজীপুরে বাসে আগুন ইউক্রেনের গোয়েন্দাপ্রধানের স্ত্রীকে বিষপ্রয়োগ মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে ৩ বাংলাদেশি নিহত, নিখোঁজ ৪ অবরোধের সমর্থনে জবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল সোনারগাঁয়ে ট্রাকে আগুন, দগ্ধ ১ অবরোধ সফলে ধানমন্ডিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে কোটিপতি!

  • বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা : রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা ওয়াসার মোডস জোন-৪-এ কর্মরত শামসুল হক চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে। পরে সহকারী লাইনম্যান ও সুপার লাইনম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তিনি অবৈধ উপায়ে গড়েছেন বিশাল অর্থের সাম্রাজ্য। ছোট এই পদে কর্মরত থেকে তিনি কীভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন, এ প্রশ্ন অনেকের।

শামসুল হকের দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত এসব সম্পদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ রয়েছে। দুদক বলছে, ওই অভিযোগে জানা গেছে বর্তমান তার দুটি বাড়ির আনুমানিক বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি। যেটি তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত তদন্তের পর ভালোভাবে জানানো যাবে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শামসুল হক। তার দাবি, বাড়ি-গাড়ির মালিক তিনি নন, এসব তিনি তার বাবা ও স্ত্রীর সূত্রে পেয়েছেন।
তবে তার বাড়ির আশপাশের অন্যান্য বাড়ির মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসব বাড়ির মালিক শামসুল হক নিজেই, তিনি মিথ্যা কথা বলছেন।

শামসুল হকের এমন বক্তব্যের পর তার এলাকায় সরেজমিনে জানা যায়, চাকরির প্রথম জীবনে তিনি পরিবার নিয়ে খুব অর্থসংকটে ছিলেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে সহকারী লাইনম্যান হওয়ার পর তার কপাল খুলে যায়। কয়েক বছরের মধ্যে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন। অবৈধ পথে এসব সম্পদ অর্জনের পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হঠাৎ করে শামসুল হকের এমন পরিবর্তন এলাকাবাসীর নজরে আসে এবং পাড়ামহল্লায় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ওঠে। জনমনে নানা ধরনের প্রশ্ন ওঠার বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে এসব সম্পদ পরিবারের সদস্য ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে নিজেকে অর্থহীন ও নিঃস্ব বলে দাবি করেন।

দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসায় চাকরিরত অবস্থায় শামসুল হক মিরপুরে দুটি বাড়ি করেছেন। তার নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। শামসুল হক পারিবারিকভাবে গাড়িও ব্যবহার করতেন। তার নামে-বেনামে বিপুল অর্থসম্পদ থাকার অভিযোগটি আমলে নিয়েই তদন্ত করার সুপারিশ রয়েছে দুদকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামসুল হক চাকরির সুবাদে ওয়াসায় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের বদৌলতে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। একটি সূত্র জানায়, শামসুল হক বর্তমানে মিরপুর-১-এর শাহ আলী এলাকার অ্যাভিনিউ-১, ব্লক-বির ২০ নম্বর বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করেন। এ বাড়িটিও তিনি অবৈধ উপায়ে করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিরপুরের একাধিক বাড়ির মালিক ও দীর্ঘদিনের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে আঁতাত করে মিরপুরে ওয়াসার বিভিন্ন ধরনের কাজ নিজের কবজায় নেয় শামসুল হকের সিন্ডিকেট। তিনি সামান্য একজন কর্মচারী হয়েও নিয়ন্ত্রণ করেন সংশ্লিষ্ট বড় কর্মকর্তাদের।

অভিযোগ আছে, কোনো গণমাধ্যমকর্মী তার কাছে বা এলাকায় গিয়ে এসব অবৈধ অর্থের খোঁজ নিতে গেলে তাদের পেছনে সন্ত্রাসী ও গুন্ডা লেলানো এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে তাকে মিরপুর এলাকার কিছু প্রভাবশালী অসাধু ব্যক্তি সহযোগিতা করেন।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর-১-এর বি ব্লকের অ্যাভিনিউ-১-এর ২০ নম্বর বাসার নিচতলায় ফরচুন ফার্মেসি পরিচালনা করেন শামসুল হকের জামাতা আকরাম হোসেন। যেটির মালিকানা তার নিজের হলেও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। শামসুল হকের ওই বাসার নিচতলায় এশিয়ান ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি অফিস রয়েছে। অন্যদিকে পাশের ছয়তলার বাড়িটি তার স্ত্রীর নামে বলে জানা গেছে।

দুদকের অভিযোগ থেকে জানা যায়, শামসুল হকের মিরপুর-১-এর ২ নম্বর রোড, ব্লক-বি, শাহআলী থানা রোড, ২৯ নম্বর বাড়িটি তার নিজের নামে ছিল। বাড়িটি ছয়তলাবিশিষ্ট। বর্তমানে তার এসব বাড়ির আনুমানিক বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি। তিনি অবৈধভাবে এসব অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ফোনে জানতে চাইলে শামসুল হক এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আপনি আমার এলাকায় আসেন। এসে কথা বলেন, পরে সব জানতে পারবেন। আর যদি না আসেন, তাহলে যা পারেন করেন।’

ওয়াসায় আপনার চাকরিজীবন শুরু হয়েছিল পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে। এখনো চাকরি করছেন। কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি সহকারী লাইনম্যান থেকে সুপার লাইনম্যান হয়েছি। এসব বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই না। এটি ওয়াসার ব্যাপার, আপনি জানার কে? আপনি আমার এলাকায় এসে দেখা করেন, সব জানতে পারবেন। তা ছাড়া এখন আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না।’

দুদকে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ হওয়ার পর আপনি তাদের জানিয়েছেন যে আপনি অসুস্থ। আসলে কী রোগে আপনি আক্রান্ত হয়েছেন- জানতে পারি কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে অসুস্থ।’

তা হলে আপনি প্রতিদিন অফিস করছেন কীভাবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘সেটা আপনার বিষয় না। যা বলার আমার এলাকায় এসে বলেন, ভালো হবে।’

শামসুল হকের মোবাইলে ফোন কল দেওয়ার কিছু সময় পর নাইমুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিজেকে শামসুল হকের ভাতিজা ও একটি পত্রিকার ‘সম্পাদক’ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। অথবা আপনি আমাদের এলাকায় আসেন, কথা বলি। তারপর আপনি বুঝতে পারবেন, আসল ঘটনা কী? আপাতত আপনি আর তাকে (শামসুল হক) কল দিয়েন না এবং সংবাদ ছাপানোর দরকার নেই, যা বলার, আমাকে বলতে পারেন।’

আমি তো আপনার শামসুল হকের এলাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বিষয়টি অস্বীকার করলেও আশপাশের সবাই বলেছেন ওই সব বাড়ি-গাড়ির মালিক তিনি নিজেই। তাহলে এসব অস্বীকার করছেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাইমুল ইসলাম জানান, শামসুল হক তার বাবা এবং শ্বশুরের সম্পদ পেয়েছেন।

একসময় তো সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন তিনি। তাহলে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরাসরি আসেন, দেখা হোক। সব বুঝিয়ে বলব। তা ছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি দুদক দেখবে। আপনাদের দেখার দরকার নেই।’

এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, শামসুল হক সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন, সে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে ঘুষ নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়েই তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে।

তার বিরুদ্ধে তদন্তকারী দুদকের সাবেক উপপরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানান, ‘আমি থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে একটি স্মারক নম্বরে দুদকে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়। যার নম্বর ৩২১৪০।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, শামসুল হকের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে দুদকে একটি মামলার ফাইল রয়েছে।

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved