ঢাকা : ক্ষমতাসীনদের হরেক কিসিমের নির্বাচনী প্রতারণার নির্লজ্জ পৃষ্ঠপোষক কে এম নুরুল হুদা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা তার আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের খান পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় বেজায় মনক্ষুন্ন হয়েছেন। তাই সেখানে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের পক্ষে প্রচারনায় তিনি মাঠে নেমেছেন, মাঠে নেমেছেন রাতে ভোট ডাকাতি করে দশমিনা-গলাচিপা আসনে নৌকার অটো এমপি সিইসির আপন ভাগ্নে এস এম শাহজাদা, সহোদর আবু তাহের খানসহ তাদের পুরো পরিবার।
বুধবার(৩ নভেম্বর)সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কড়া সমালোচনা রুহুল কবির রিজভী বলেন,’আওয়ামী লীগের জোরালো সমর্থক কে এম নুরুল হুদা গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনার দায় নিবে না। দায় প্রশাসনের। খুনোখুনিতে তিনি নাকি বিব্রত ও উদ্বিগ্ন। কে এম নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন কমিশনের স্বয়ংসম্পূর্ণ সঙ্গা পাল্টে গেছে। কমিশনের স্বাধীন সত্তাকে হরণ করেছেন কে এম নুরুল হুদা নিজেই।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,’নিশিরাতে ভোট ডাকাত সরকারের লোকজন এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নিজেরাই কামড়া কামড়ি, মারামারি করে মরছে আর গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের শান্তি বিনষ্ট করছে। জনগণের মধ্যে আতংক-অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। চলমান ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
তারা প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত সহিংসতা করছে। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ঢাকায় বসে টাকার বিনিময়ে প্রকাশ্যে মনোনয়ন বানিজ্য করছে আর প্রার্থীরা গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে। এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে-লুটপাটের লোভ। কোন মতে দলীয় টিকেট পেলেই সিলেকশনের চেয়ারম্যান হয়ে যাবে, তখন হাতিশালে হাতি আর ঘোড়াশালে ঘোড়ার অভাব হবে না।
সব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। মেরে কেটে যেভাবে হোক চেয়ারম্যান-মেম্বার হওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে তারা। কোন কোন জায়গায় প্রার্থীরা নৌকায় ভোট না দিলে ভোটারদের এলাকা ছাড়া করার হুংকার দিচ্ছেন। আজ খবরের কাগজে দেখলাম, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ মোঃ শাহ আলম হুমকি দিয়েছেন, “যারা নৌকার বিরোধিতা করছে এবং নৌকায় ভোট দিবে না তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা মারা গেলে কবরস্থানে কবর দিতে দেয়া হবে না। এমনকি তাদের মসজিদেও নামাজ পড়তে দেয়া হবে না।”
রিজভী বলেন,’নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচনের সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে এর দায় তাদের ওপর বর্তাবে।” এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, নির্বাচনে সহিংসতার দায় স্থানীয় প্রশাসনের উপর চাপাচ্ছে মেরুদন্ডহীন পাপেট নির্বাচন কমিশন। অথচ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসে, সেক্ষেত্রে এতসব সহিংসতা, অনিয়মের দায় নির্বাচন কমিশনের। ভোট ডাকাতিকে সহায়তা দিতে গিয়ে নির্বাচনী হিংসা, সন্ত্রাসবাদকে লালন-পালন করেছে কমিশন।
তিনি বলেন,’নির্বাচনী সহিংসতা দল, পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজকেও আক্রান্ত করে এবং এর রেশ দীর্ঘসময় পর্যন্ত চলতে থাকে যা সামাজিক সম্পর্ককে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ঠেলে দেয়। আওয়ামী লীগ কখনোই নিজেদের স্বার্থসর্বস্বতার উর্দ্ধে উঠতে পারে না। এরা অবৈধ ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতেও দ্বিধা করে না। বর্তমান সময় সংকটময় ও সমস্যাদীর্ণ।
গণতন্ত্র হরণ আওয়ামী লীগের ডিএনএ-তে মিশে আছে। এদের কর্তৃত্ববাদী হিং¯্র শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলেও সিইসি’র নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দেশের ভোটারদের সাথে প্রতারণা করেই চলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম,হাবিবুন নবী খান সোহেল,মীর সরাফৎ আলী সপু,আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।