অনলাইন ডেস্ক: নারী ফটুবল দলের বদলে যাওয়া এক সাফল্যের গল্প। প্রথম শুরুটা ছিল ২০১৮ সাল এক ফুটবল ম্যাচে ৪-০ গোলে হেরে যাওয়ার গল্পের মধ্য দিয়ে। ওই পরাজয় থেকেই লজ্জার সৃষ্টি হয় জয়ের নেশা। তেমনি ঠিক পরের বছরই সেই দলকেই ০-৫ গোলে পরাজিত করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে নারী ফুটবল দলটি। এরপর থেকে তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছিনিয়ে এনেছে একের পর এক সাফল্য। বিভাগের সেরা নারী ফুটবল দল হিসেবে খ্যাতি অর্জন।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর নারী (অনূর্ধ্ব-১৭) ফুটবল দলের বদলে যাওয়ার এক গল্প। দৃঢ় মনোবল আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সঠিক দিক-নির্দেশনায় অর্জিত হয়েছে এ সাফল্য। এ নারী ফুটবল দলের কারিগর হিসেবে কাজ করছেন সাবেক ফুটবলার এবং ক্রীড়াবিদ মো. সুরুজ হক লিটন। পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলের কোচ সুরুজ হক লিটনের সঙ্গে গত (৭ সেপ্টেম্বর) কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, পৌরশহরের ঐহিত্যবাহী নারী বিদ্যাপীঠ পলাশবাড়ী পিয়ারী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা ১১’শ। ২০১৮ সালে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সে সময় স্কুল পর্যায়ে গাইবান্ধায় অনুষ্ঠিত এক ফুটবল ম্যাচে পিয়ারী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অংশ নেয়। খেলায় গাইবান্ধা আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে ৪-০ গোলে আমরা পরাজয় বরণ করি। সেই পরাজয়ে দলের প্রতিটি সদস্যসহ আমি অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে মনে মনে ভবিষ্যতের জন্য একটা সংকল্প করি।
বাড়ি ফিরে ওইসব ছাত্রীদের নিয়ে শুরু হয় আমার ভবিষ্যত মিশন। এক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই মিলে যায় সবকিছু। ঠিক পরের বছরই অনুষ্ঠিত এক ফুটবল ম্যাচে সেই আসাদুজ্জামান বালিকা বিদ্যালয় দলকে আমরা ৫-০ গোলে পরাজিত করি। এ অর্জন আমাদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে তোলে। পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলকে নিয়ে আরো এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। মেয়েদের মনোবল আর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং তাদের বুদ্ধিমত্তায় মিলতে থাকে একের পর এক সাফল্য।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (জেএফএ) পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জেএফএ কাপ (অনূর্ধ্ব-১৭) বালিকা ফুটবল টুর্ণামেন্টে রংপুর আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব।
একই বছর এসকেএস বালিকা ফুটবল টুর্নামেন্টে (অনূর্ধ্ব-১৭) গাইবান্ধা জেলা চ্যাম্পিয়ন হয় নারী ফুটবল দল। এছাড়াও ২০২০ এবং ২০২১ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোন্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে (অনুর্ধ-১৭) টানা দুইবার গাইবান্ধা জেলা চ্যাম্পিয়ন হয় পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দল। বর্তমানে নারী দলের ৪ জন সদস্য ঢাকায় বসুন্ধরা কিংসে সুযোগ পেয়ে প্রশিক্ষণরত। ভবিষ্যতে তারা অনেক ভালো করবে বলে আমার আত্মবিশ্বাস।
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুর দিকে মাত্র ৩ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রশিক্ষণ করতে হয়। অভিভাবকরা নারীদের ফুটবল খেলা প্রশিক্ষণে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। শিক্ষকদের সমন্বয়ে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে মেয়েদের মাঠে নামাতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
এরপর বাড়ি থেকে প্রশিক্ষণ মাঠে যাতায়াতের জন্য মেয়েদের খরচ দিতে হয় নিজের কাছ থেকে। শতচেষ্টার ফলেও অনেকের বাল্যবিয়ে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। এরকম হাজারো প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নারী ফুটবল দলের পথচলা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে তিনি জানান, পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলকে নিয়ে আরো এগিয়ে যেতে চাই অনেকটা পথ। সে লক্ষ্যে শুধু মেয়েদের নয়, নিজেরও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আওতায় কোচিং এ উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ এ প্রতিবেদককে বলেন, সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের প্রতিটি স্তরে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পলাশবাড়ী নারী ফুটবল দলের ধারাবাহিক সাফল্যে আমরা উপজেলাবাসী গর্বিত। তাদের সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।