শিরোনাম :
ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়ার কথা স্বীকার করলেন রাঙ্গা ভিসানীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফের ব্যাখ্যা আমেরিকার ভিসা নীতিতে সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে: ফখরুল দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জনের মৃত্যু এবার বিএনপিকে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম এই জালিম সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করছে: টুকু ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠানো হলে পরিণতি শুভ হবে না: আব্বাস খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই : আইনমন্ত্রী শেখ পরিবারের ভাষাই হচ্ছে গুন্ডাদের মতো: রিজভী ডাক আস‌লেই রাস্তায় নাম‌তে হ‌বে: দুদু ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিচ্ছে ৭ মুসলিম দেশ! বাংলা‌দেশ নি‌য়ে অপপ্রচার রুখে দিতে প্রবাসী‌দের প্রতি আহ্বান পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসাদের নিয়ে অনুসন্ধান করছে সিআইডি বায়ুদূষণে আজ শীর্ষ চারে ঢাকা ফেনীতে ধর্ষণের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কারাগারে

নর্থ সাউথের আজিম-কাশেমের দুর্নীতির যত অভিযোগ

  • শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আজিম-কাশেম সিন্ডিকেটের স্বেচ্ছাচার, সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের বিকাশ ঘটায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ক্রমেই কমছে শিক্ষার মানও।

বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতি, আর্থিক জালিয়াতি ও জঙ্গিবাদের কবল থেকে রক্ষায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য এম এ কাশেমের নানা দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস্ অভিযোগ করেন, আজিম-কাশেম সিন্ডিকেটের স্বেচ্ছাচার, সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের বিকাশ ঘটায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ক্রমেই কমছে শিক্ষার মানও।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ সেলিম হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন জুয়েল, মতিউর রহমান তালুকদার, মোহাম্মদ ফজলুল বারী প্রমুখ।

জমি কেনার নামে ৪২৫ কোটি টাকা লোপাট

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস করার নামে আজিম ও কাশেম সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছে। পূর্বাচলসংলগ্ন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২৫০ বিঘা নিচু জমি কিনে ৪২৫ কোটি টাকা লোপাট করেছে সিন্ডিকেটটি। আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাজারদরের চেয়ে সাত গুণ বেশি দামে সেই জমি কেনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ২০১৪ সালে যখন জমিটি কেনা হয়, তখন বাজারদর ছিল মাত্র ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু আজিম-কাশেম সিন্ডিকেট বিঘাপ্রতি ক্রয়মূল্য দেখিয়েছে ২ কোটি টাকা। এভাবে তারা আত্মসাৎ করেছে ৪২৫ কোটি টাকা। আবার সেই জমি ভরাটের নামেও ৩৫ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

আজিম-কাশেমের কমিশন-বাণিজ্য

সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের হিসাব বিবরণীর তথ্য তুলে ধরে ড. সুফি সাগর সামস্ বলেন, নতুন ক্যাম্পাসের নামে যে ডেভেলপার্স কোম্পানির কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা কমিশন নিয়েছেন আজিম-কাশেম, যার মধ্যে ৪ কোটি টাকা নেয়া হয় বায়নার সময়। আর বাকি ১০ কোটি টাকা নেয়া হয় জমি নিবন্ধনের পর।

কীভাবে সেই টাকা তাদের হাতে পৌঁছায়, তাও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, আশালয় হাউজিংয়ের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের বনানী শাখার হিসাব নম্বর ১০৩১২০০০০০০৮৭১ থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখার কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ নগদ ৫ কোটি টাকা তুলে কাশেমের বাসায় পৌঁছে দেন। আর একই ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার কর্মকর্তা কাওসার মাহমুদ বাকি ৫ কোটি টাকা পৌঁছে দেন আজিমের বাসায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আজিম-কাশেম ও তাদের স্ত্রীরা সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক হওয়ায় কর্মকর্তারা তাদের বাড়িতে টাকা পৌঁছে দিতে একপ্রকার বাধ্য হন।

টিউশন ফির টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, শিক্ষার্থীদের ওপর টিউশন ফির বোঝা চাপিয়ে সেই টাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। টিউশন ফির টাকায় ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ সদস্যের জন্য অবৈধভাবে কেনা হয় বিলাসবহুল আটটি রেঞ্জ রোভার ও একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। যে জন্য ব্যয় হয় ২৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয়, গাড়ির চালকদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং তেল খরচও নেয়া হতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

নর্থ সাউথ যেন টাকা বানানোর হাতিয়ার

সংবাদ সম্মেলনে ড. সুফি সাগর সামস্ আরও অভিযোগ করেন, আজিম-কাশেম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তাদের টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ উদ্দেশ্যেই ২০১৮ সাল থেকে সিটিং অ্যালাউন্স বাবদ প্রতিটি বোর্ড অফ ট্রাস্টির মিটিংয়ে এক লাখ টাকা নিয়ে আসছে। আর অন্যান্য মিটিংয়ে নেয় ৫০ হাজার টাকা। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে টাকার অঙ্ক অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নীতিমালায় সিটিং অ্যালাউন্স ফি নির্ধারিত থাকলেও তা মানা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, ফির পরিমাণ বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে মিটিং বারবার মুলতবি করে একাধিক দিনে সমাপ্ত করার নজিরও রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, অনেক সময় কোনো কমিটির সদস্য না হয়েও মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে সিটিং অ্যালাউন্স নিয়েছেন কেউ কেউ। করোনা মহামারির এ সময়ে অনলাইন মিটিং করেও সমপরিমাণ অ্যালাউন্স নিয়েছেন ট্রাস্টিরা।

নর্থ সাউথের আজিম-কাশেমের দুর্নীতির যত অভিযোগ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা নিজেদের ব্যাংকে

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কোনো রকম নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন সাউথইস্ট ব্যাংকে এফডিআর করেন আজিম-কাশেম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সম্পত্তির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করতেই টাকাগুলো সাউথইস্ট ব্যাংকে রাখেন তারা।

টাকা কামাতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দশনা অমান্য করে নর্থ সাউথে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিরও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ জন্য নেয়া হয় বাড়তি টাকাও। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিবিএ অনুষদে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পরামর্শকমূলক গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করে ইউজিসি। আইন অনুষদেও অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ করা হয়।

জঙ্গিবাদে উৎসাহ প্রদান

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, শিক্ষার্থী-অভিভাবকের কাছে আকর্ষণীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছে। ফলে ভয়ংকর সব জঙ্গি সংগঠনের নিরাপদ আশ্রয় এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। যার দায়ভার এড়াতে পারে না আজিম-কাশেম সিন্ডিকেট। এ সময় আরও বলা হয়, লেখক রাজীব হায়দারকে ২০১৩ সালে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে। সেই হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি নাফিস ইমতিয়াজকে ১০ বছর পর আবারও ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে বানানো হয়েছে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান

কেবল আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতিই নয়, আত্মীয়করণের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভূলণ্ঠিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, এম এ কাশেম তার মেয়ের স্বামীকে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। ট্রাস্টি বোর্ডের আরেক সদস্য বেনজীর আহমেদ তার ছেলে রাহাত আহমেদকে প্রধান করে স্টার্টআপ নেক্সট নামে নিয়মবহির্ভূতভাবে একটি প্রোগ্রাম চালু করেন, শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির অজুহাতে যেখানে ব্যয় করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগেও প্রাধান্য পায় নিকট আত্মীয় ও পরিচিতজনরা।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. সুফি সাগর সামস্ বলেন, ‘আপনাদের সামনে যে অভিযোগ রেখেছি, তা রূপকথার গল্প মনে হলেও দিনের আলোর মতো সত্য। এ-সংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।

‘সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ ছাড়া আমাদের বিশেষ কিছু চাওয়ার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়েটিকে জঙ্গিবাদের অভায়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার আজিম-কাশেম সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রতিবাদই এ সংবাদ সম্মেলন।’

প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী সব পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ড. সুফি সাগর বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এখনও নিভু নিভু যে আলো জ্বলছে, আজিম-কাশেম সিন্ডিকেটের অপকর্ম চলমান থাকলে তাও থাকবে না। অনিয়ম-দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে রক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’

অভিযুক্তদের কথা

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম এ কাশেমের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আপনি ইউনিভার্সিটি অথরিটিকে প্রশ্ন করেন।

আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত নই, আমরা ট্রাস্টি, আমরা ম্যানেজমেন্ট লেভেলে আর কী। আমাদের দায়িত্ব হলো ট্রাস্টটাকে ম্যানেজ করা আর অ্যাক্টিভিটিজটা করে ইউনিভার্সিটি। তাই সব খবর আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই পাবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা নিজেদের ব্যাংকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যাংক নেই, এটা পাবলিকের ব্যাংক। আমরা এই ব্যাংকের অংশীদার, শেয়ারহোল্ডার মাত্র। আমরা ডিরেক্টর হিসেবে আছি, কিন্তু এটা চলে তো বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে।’

ডেভেলপারস কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন নেয়ার অভিযোগ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমি কিছু জানি না, সরি সরি এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, ধন্যবাদ।’

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved