শিরোনাম :
সিরাজগঞ্জে যুবদলের ৩ নেতা গ্রেফতার তিন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ কার্যকর রুশ-ভারতের সাহায্য নিয়েও সরকারের পতন ঠেকানো যাবেনা বিএনপির আরও দুই নেতাকে বহিষ্কার ঋণ আমানতের সুদের ব্যবধান তুলে নিল বাংলাদেশ ব্যাংক আদালত চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইইউর কারিগরি প্রতিনিধি দল ঢাকায় ক্রাচে ভর করে মিছিলে যুবদল নেতা রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৪ বায়ুদূষণে আজ শীর্ষ চারে ঢাকা শ্যামলের নেতৃত্বে রামপুরায় সড়ক অবরোধ ও মিছিল গাজীপুরে বাসে আগুন ইউক্রেনের গোয়েন্দাপ্রধানের স্ত্রীকে বিষপ্রয়োগ মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে ৩ বাংলাদেশি নিহত, নিখোঁজ ৪ অবরোধের সমর্থনে জবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

ধরপাকড় চলছেই, বাড়িছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা

  • বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা: বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় থেমে নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী। শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও চলে গেছেন আত্মগোপনে। বিশেষ করে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকছেন না। সবাই গ্রেফতার এড়াতে ঘরছাড়া হয়েছেন।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। সমাবেশ শুরুর দেড় ঘণ্টা পর পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক পুলিশসহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।

সংঘর্ষের পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে দলটির অন্তত এক ডজন শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হন। জেলা ও মহানগর পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতা এরই মধ্যে আটক হয়েছেন। আরও অনেককে খুঁজছে পুলিশ। এমন অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও গ্রেফতার আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকে নিজেদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও ব্যবহার করছেন ন৷।

বিএনপির ঢাকা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অবস্থানের কারণে নির্ঘুম রাত কাটছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বাড়ি থাকছেন না।

গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় বাড়ি যাচ্ছেন না দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার নাজমুল আলম (ছদ্মনাম)। তার নামে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি আদালতে হাজিরাও দিয়েছেন। কোনোটাতে জামিনে আছেন। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু হলে তার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নাজমুল বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে যোগ দিতে গত ২৫ অক্টোবর ঢাকায় আসি। কিন্তু সেদিনের পর থেকে আর গ্রামে যেতে পারিনি। বউকে ফোন করে বাড়ির পরিস্থিতি জানতে চাইলে বউ জানায়, গ্রামে পুলিশ নিয়মিত এসে আমার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। সেজন্য ঢাকতেই অবস্থান করছি।’

শুধু নাজমুলই নয়, তার মতো দলটির বহু নেতাকর্মীর অবস্থা এমনই।

নেত্রকোনার মদন উপজেলার বিএনপির এক নেতা বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগে তার উপজেলায় বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ৪৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯ জন জামিনে বের হয়ে এসেছেন। বাকিরা এখনো কারাগারে আছেন। এছাড়াও ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আসার পর গণ্ডগোলের ঘটনায় ৩৭ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের কেউই আর গ্রামে যেতে পারেননি।’

মৌলভীবাজার সদর ও কুলাউড়া উপজেলা থেকে বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি নিজেও বাড়িতে থাকছি না। কখন গ্রেফতার হই সবসময় এই আতঙ্ক কাজ করছে।’

নরসিংদীর যুবদলের নেতা শাওন আহাম্মেদ কয়েক বছর থেকে ঢাকায় আছেন। বিএনপি ও যুবদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রথম সারিতে থাকেন তিনি। কয়েকবার বিভিন্ন মামলায় জেলও খেটেছেন। ২৮ অক্টোবরের পর তিনি আর রাজধানীতে থাকছেন না। গ্রেফতার আতঙ্কে ঢাকার বাইরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে আছেন।

শাওন বলেন, ‘আমার মতো অনেক নেতা গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা কেউ মোবাইলে কথা বলছি না। অধিকাংশ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে ইন্টারনেটে’।

সিলেট বিভাগীয় শহরের মহিলা যুবদলের এক নেত্রী জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে সংসার চলে। পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি। কিন্তু দশ দিন থেকে বাসায় যেতে পারছেন না। ফলে তার আয় বন্ধ রয়েছে।

মহিলা যুবদলের ওই নেত্রী বলেন, ‘আমার মতো এখানকার বিএনপির নেতাকর্মীদের সবার অবস্থা একই৷ আমরা কেউ ভয়ে ফোন ব্যবহার করছি না। মোবাইল ব্যবহার করলে ট্রাকিং করে সেই নেতাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেকে রাতে জঙ্গলে পালিয়ে থাকেন। সবকিছু থাকলেও পুলিশের ভয়ে বাড়িতে আসতে পারছেন না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরাঞ্চলের বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘বিরোধীদলকে দমন করতে সরকার গণগ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। জেলা ও উপজেলার প্রতিটি নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ যাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা আমাদের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সরকার সেই অধিকারকে হরণের চেষ্টা করছে। নির্বাচনের আগেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের পর নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে নেতাকর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের কাছে এখন প্রতিটি রাত আতঙ্কের। রাতে কেউ ঘুমাতে পারি না। কখনো বাঁশঝাঁড়, কখনো জঙ্গল আবার কখনো গ্রামের পাথারে রাত কাটাতে হয়।’

৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে গ্রেফতার করে পুলিশ

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর পুলিশ সদস্য হত্যার পর সারাদেশের বিভিন্ন থানায় জড়িতদের ব্যাপারে তথ্য পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় যারা আশপাশে ছিলেন সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে ছবি পাঠানো হচ্ছে। তারাও এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে সহায়তা করছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় ১০২ মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে রাজধানীর চকবাজার থানায়। এরপর রমনা, শাহজাহানপুর, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ভাটারা ও পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার হয়েছে মিরপুর ও লালবাগ এলাকায়।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, প্রতিটি নাশকতার ঘটনায় ঢাকা জেলা পুলিশ মামলা নিয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। এসব ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘রাজধানীতে নাশকতার মামলায় যারা আসামি হয়েছেন তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে দেশের বড় দুই দলের বসা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে হামলা মামলা গ্রেফতার নতুন কিছু নয়। এগুলো অতীতেও হয়েছে। পরস্পর দোষারোপের জায়গাটা যত বাড়বে রাজনৈতিক হামলা মামলা কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহিংস আচরণের ক্ষেত্রটা তত বাড়তে থাকবে। আগামী দিনের রাজনীতি আরও বেশি সহিংসপ্রবণ হয়ে উঠবে। যা কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই অবস্থায় একটা জরুরি সুরাহা চাই। একটা সমঝোতা চাই। আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলো দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে।’

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved