আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আঙ্কারায় বৃহস্পতিবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে দেখা করেন তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। ছবি: এএফপি
আঙ্কারায় মুত্তাকির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভুসোগলু বলেন, ‘তালেবানের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। স্বীকৃতি দেয়া ও সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।’
আফগানিস্তানে চলমান মানবিক সংকট নিরসনে তালেবানকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তুরস্ক। তবে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় দেশটি।
তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এসব বার্তা দিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতা দখলের পর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে মরিয়া তালেবান। সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকও করে তালেবানের প্রতিনিধিদল।
এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার তুরস্কে পৌঁছান তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি।
তালেবানের ওপর পশ্চিমা দেশের নিষেধাজ্ঞা আফগান পরিস্থিতি আরও নাজুক করতে পারে বলে বৈঠকে সতর্ক করেন মুত্তাকি।
আঙ্কারায় মুত্তাকির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভুসোগলু বলেন, ‘তালেবানের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
‘স্বীকৃতি দেয়া ও সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘আফগান অর্থনীতি ভেঙে পড়তে দেয়া যাবে না। বাইরের দেশে থাকা আফগানিস্তানের অ্যাকাউন্ট যেসব পশ্চিমা দেশ জব্দ করেছে, তাদের আরও নমনীয় হতে হবে, যাতে করে আফগান জনগণ তাদের বেতন ঠিকমতো পায়।’
১৫ আগস্ট কাবুল পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে যায়। এরপরই দেশটিতে তহবিল প্রকল্প স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক।
ন্যাটোভুক্ত দেশের মধ্যে একমাত্র মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্ক। চলতি বছরে আগস্টের শেষে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা চলে যাওয়ার পর দেশটি পুনর্গঠনে বিভিন্নভাবে সহায়তা করার উদ্যোগ নেয় আঙ্কারা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা আসার প্রধান পথ কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার প্রস্তাবও দিয়েছিল তুরস্ক। তবে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তালেবান নেতারা।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফের জানান, নিয়মিত ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগে কাবুল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভুসোগলু বলেন, ‘আজকে আমরা আরেকবার তালেবান সরকারকে বুঝিয়েছি, শুধু আমাদের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্যও কাবুল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি।’
কাভুসোগলু জানান, আফগান মেয়েদের স্কুলে ও নারীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে তালেবানের প্রতি বৈঠকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা তালেবান সরকারকে বলেছি, আমাদের এই আহ্বানকে পূর্বশর্ত বা দাবি হিসেবে না দেখতে। এটি শুধু আমাদের নয়, বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানপ্রধান দেশেরও চাওয়া।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি।