নিউজ ডেস্ক: যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অ্যাহত রাখার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।’
সোমবার (২ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় দলের সদস্যরা (এপিপিজি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লন্ডনে তার অবস্থানস্থল তাজ হোটেলে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা বিষয়ক এপিপিজির চেয়ার এবং বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলী এমপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশের সদস্যদের নিয়ে এপিপিজি ভাইস চেয়ারম্যান বীরেন্দ্র শর্মা এমপি, ভাইস চেয়ার ভ্যালেরি ওয়াজ এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান হুসেন এমপি এবং ফয়সল চৌধুরী এমএসপি, চেয়ার, স্কটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের ক্রস-পার্টি গ্রুপ। পরে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে প্রতিনিধি দলকে শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সব সংস্কার করা হয়েছে। এজন্য তারা একটি আইন প্রণয়ন করেছেন এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছেন। এছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে ইসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলে থাকাকালীন তার দল আওয়ামী লীগের প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থা করেছে।
বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমান সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে এপিপিজি প্রতিনিধিদল সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন তদারকির জন্য বাংলাদেশ এপিপিজি প্রতিনিধি দলকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
এপিপিজি’র সকল সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘসময় ধরে অব্যাহত গণতন্ত্র ও স্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসা করছে এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিনিয়োগ বাড়ছে।
বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৯টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বৃহত্তর বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।
তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও জাপানের মতো বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যকেও একটি নিবেদিত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে যেতে চায়।’
মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক তহবিল বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা সম্প্রতি হ্রাসের প্রবণতা দেখাচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অমানবিক অভিজ্ঞতার প্রসংগ টেনে ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কখনোই যুদ্ধ চায় না, বরং চায় যে আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান হোক।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা কখনই যুদ্ধ চাই না, কারণ, দরিদ্র জনগণ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যুদ্ধের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।