বিনোদন ডেস্ক: নিজের সংসার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন শাকিব খান। প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসে তাঁর স্ত্রী চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর বিষয়। এবার ব্যক্তিগত জীবন ও শাকিবের ভাষ্য নিয়ে নিজের অবস্থান খোলাখুলিভাবে তুলে ধরেছেন বুবলী। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- শামছুল হক রাসেল
আপনি বললেন বিচ্ছেদের জন্য কেউ সংসার করে না, আপনারা অনেক ভালো আছেন। অন্যদিকে শাকিব খান বললেন সম্পর্কটি ভালো জায়গায় নেই। এ ব্যাপারে আপনার ভাষ্য?
দেখুন, আজকে জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমার মনে হচ্ছে আমি হয়তো ব্যক্তিজীবন নিয়ে আপনাদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলি না, অনেক টেলিভিশন চ্যানেলে গিয়ে সবকিছু তুলে ধরি না। তাই অনেক কিছু নিয়েই গত সাত বছরে আমি বহু মানুষের ভুল বোঝার কারণ হয়েছি। শুধু নিজের ব্যক্তিজীবন আড়ালে রাখার জন্য আর অন্য কাউকে যেন অসম্মান করে কথা বলতে না হয় সে জন্য আমি চুপ থেকেছি। আর এটাকেই অনেকে তাদের হাতিয়ার বানিয়ে কাজে লাগিয়েছে। কারণ সবকিছু তুলে ধরলে অনেক ইস্যুতেই অনেকে অসম্মানিত হতো, আমি এটা কখনই চাইনি।
আর এটাকে ব্যবহার করেই আমাকে ছোট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি এখনো বলব আমি আমার জায়গা থেকে কখনই বিচ্ছেদের জন্য বিয়ে করিনি, সন্তান নিইনি। অবশ্যই সংসার করার জন্য, সুন্দর একটা পরিবারের জন্য আমি অনেক কিছু মেনে নিয়ে এখনো সুখে থাকার চেষ্টা করছি। কারণ বিচ্ছেদ কখনই ভালো কিছু নিয়ে আসে না।
শাকিব খান এটাও বললেন বাচ্চাদের কারণে অনেক সত্য প্রকাশ করতে পারেন না। এ সত্যটা আসলে কী?
আসলে প্রথমে বাচ্চার মা অথবা বাচ্চার বাবার প্রতি পরস্পর সম্মান থাকা উচিত। তারপর বাচ্চা। মা-বাবার মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধার বিষয়টি না থাকলে তার প্রভাব বাচ্চার ওপর পড়বেই। তাই শাকিব খানকে আমার স্বামী হিসেবে, বাচ্চার বাবা হিসেবে এবং সহকর্মী হিসেবে সম্মান করি বলেই আমি অনেক ব্যাপারে অনেক কথা বলি না। আসলে চলচ্চিত্র জগতের বাইরেও আমাদের সবার ব্যক্তিজীবন আছে, মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে সবার আগ্রহ থাকবে। কিন্তু অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। অনেকে অনেক বেশি করে ফেলছে, যা নিয়ে হয়তো অভিমান করে বিরক্ত হয়েই তিনি আমাকে নিয়ে এরকম মন্তব্য করেছেন। দেখুন, আমাদের এই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে শাকিব খানের অবদান ভুলবার নয়।
তিনি ২০ বছর যাবৎ দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন, বহু ব্যবসাসফল সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন, হল মালিকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। দর্শকদের বিনোদন দিচ্ছেন, দিনরাত পরিশ্রম করছেন, পারিবারিক সময় দিতে পারেননি- শুধু সিনেমা নিয়ে ভেবেছেন, দর্শকদের কথা ভেবেছেন। সেই মানুষটার ব্যক্তিজীবন নিয়ে যেভাবে চর্চা হয়, তাঁর পেশাগত জীবন নিয়ে সেই চর্চা হয় না।
শাকিব বলেছেন মানুষ চিনতে তিনি ভুল করেছেন, কিছু ভুল মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। আপনি কী সেই ভুল মানুষদের একজন?
দেখুন, মানুষের জীবনটা খুব ব্যতিক্রম। কখন কি হয় কেউ জানে না। সময় সবকিছু পরিষ্কার করে দেয়, কে ভুল কে সঠিক তাও সময় বলে দেয়। যে সময়টা কাউকে সবচেয়ে সঠিক মনে হয়, ঠিক অন্য আরেকটা সময় গিয়ে তাকে সবচেয়ে ভুল মনে হয়। এর জন্য সময় এবং পরিস্থিতি কিছুটা দায়ী। তাই কে কখন কী ভাবছে এটা সম্পূর্র্ণ যার যার ব্যক্তিগত মতামত।
অভিযোগ রয়েছে, আপনি শাকিবের শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ইস্যু সামনে এনেছেন।
এ বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কারণ আমি কখনই শাকিব খানকে ছোট করে বা তাঁকে অপমান করে, তাঁর প্রতি অভিযোগ এনে অথবা তাঁর অসম্মান হয় এমন কোনো কথা বলিনি। অথবা এমন কোনো কাজ কখনো করিনি। হঠাৎ তাঁকে নিয়ে কটূক্তি করে কথা বলা, অপমান করা, আবার হঠাৎ করেই তাঁর প্রশংসা করা, মাথায় তুলে ফেলা, আবার মাথা থেকে ফেলে দিয়ে ছোট করে কথা বলা- এভাবে আমি কখনই রং বদলাইনি। আমি চেয়েছিলাম আমাদের ছেলের বিষয়টা সুন্দর ভাবে সামনে আসুক, যার জন্য ছেলের আড়াই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো। কিন্তু কি কারনে হচ্ছিলো না আমি জানিনা… এমনকি আমি যখন বেবী বাম্পের ছবি দিয়েছিলাম তখনও কি আমি কোনো অভিযোগ করেছিলাম তাকে নিয়ে? করিনি… অনেক কিছু ওভারলুক করেছি। বরং নিজে যত কষ্টই পেয়েছি না কেন, যে কোনো সময় আমি তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এমনকি বেবি বাম্পের ছবি দিয়েও কি আমি কোনো অভিযোগ করেছিলাম তাঁর প্রতি? অনেক কিছু ওভারলুক করে আমি সবসময় চাই সে ভালো থাকুক।
শাকিব খান বলেছেন নয় মাস তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাহলে বাবা হিসেবে তিনি কীভাবে দায়িত্ব পালন করলেন?
এসব নিয়ে আমি আসলে কখনই কথা বলতে চাইনি, কিন্তু তিনি নিজেই এসব প্রসঙ্গ আনছেন। আমারও একই প্রশ্ন, তার মানে বাবা হিসেবে ওই নয় মাস কোনো দায়িত্বই পালন করেননি তিনি। তাহলে যে বললেন বাচ্চার কথা তিনি সবার আগে ভাবেন! দেখুন, এসব নিয়ে কথা হোক আমি চাইনি। কারণ জল ঘোলা করে, পাল্টাপাল্টি কথা বললেই কথা বাড়ে।
তাই আমি বলেছিলাম আমরা ভালো আছি। করোনার সময় আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে সবচেয়ে বেশি করোনার প্রভাব ছিল, ওই জায়গায় দীর্ঘ এক বছর ছিলাম। সেখানে প্রেগনেন্ট অবস্থা থেকে শুরু করে এবং ডেলিভারি হওয়া- এরপর দুধের শিশুকে নিয়ে যুদ্ধ করে টিকে বেঁচে ফিরতে পেরেছি। তাই বাকি দিনগুলোও ইনশা আল্লাহ বাচ্চাকে ভালো রাখার সব চেষ্টা আমি করে যাব।
বীরের মা হিসেবে দায়িত্ব পালনে আপনি কতটুকু সফল?
আমি আমার জায়গায় শতভাগ চেষ্টা করি ছেলেকে ভালো রাখার। এমনকি আমি নিজে কাজ করে আমার এবং আমার ছেলের জন্য আর্থিকভাবে সব দায়িত্ব পালন করি। আমি কখনই আর্থিক সাপোর্টের জন্য তাঁর ওপর নির্ভর হইনি বা প্রেশার দিইনি। তিনি পরিবার ভেবে কোনো কিছু করার চেষ্টা করলে তা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে আমি আর্থিকভাবে অনেক কিছু নিচ্ছি এটা যারা ভেবে কমেন্ট করেন তাদের এই ভুল ধারণা থাকা উচিত নয়। খুব কষ্ট পাই যখন কিছু মানুষ এভাবে না জেনে নানা কথা বলে। এ জন্যই শুরুতে বলেছিলাম, আমার চুপ থাকাকে অনেকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়।
শাকিব খানের সঙ্গে অনেক নায়িকাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক শোনা যাচ্ছে। স্ত্রী হিসেবে বিষয়গুলো আপনি কীভাবে দেখেন?
এসব বিতর্ক আমার কানেও আসে। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে যখন বলেছে সত্য নয়, তখন তাই বিশ্বাস করেছি। কারণ তাঁর কথা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি তাঁকে বিশ্বাস করি। স্ত্রী হিসেবে, শেহজাদের মা হিসেবে এবং একজন সহকর্মী হিসেবে আমি সবসময় তাঁর পাশে আছি। দিন শেষে আমি চাই সে ভালো কাজের সঙ্গে থাকুক, ভালো ভালো চিন্তা করুক।