ঢাকা : দীর্ঘ ছয় মাস পর আবারও খোলাবাজার থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। ৮৫০ কোটি টাকায় প্রায় ৬২ হাজার টন এলএনজি কেনা হবে।
আগামী জুন মাস পর্যন্ত সরকার ১২ কার্গো এলএনজি খোলাবাজার থেকে কেনার পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। যার প্রথম চালান আসবে ফেব্রুয়ারিতে।
জানা যায়, প্রতি ইউনিট এলএনজি দাম পড়বে প্রায় ১৯.৭৮ মার্কিন ডলারের মতো। খোলাবাজার থেকে কেনা এই এলএনজি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের দিকে দেশে এসে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ঠিকাদার হিসেবে আছে ফান্সের কোম্পানি টোটাল গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার বিজনেস সার্ভিসেস।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে এই এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কাতারের রাস গ্যাস প্রথম এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি কার্গো আসে ওমান থেকেও। দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খোলাবাজার থেকেও এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়।
প্রথম দিকে এলএনজি পাওয়া যেতো প্রতি এমএমবিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) ৬ থেকে ৭ ডলারে। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ ডলারে। এই অবস্থায় গত বছরের জুলাই মাসে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ।
মোট ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হতো দীর্ঘ মেয়াদি এবং খোলাবাজার থেকে আনা এলএনজি দিয়ে। এর মধ্যে খোলাবাজার থেকে আনা হয় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই এলএনজি আনা বন্ধ হবার পর কিছুটা গ্যাসের ঘাটতি দেখা দেয়। ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় রেশনিংও শুরু করে। কিন্তু ঘাটতি মেটাতে পারছিল না। এই সিদ্ধান্তের পর সেই ঘাটতি কমে আসবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের প্রতি বছর ৮০টি কার্গো পরিচালনা করার সক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ৫৬টি কার্গো আসছে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায়। আর খোলাবাজার থেকে ২৪টি কার্গো আনার সুযোগ রয়েছে। তবে বর্তমানে যে দাম তাতে এত কার্গো আনা কঠিন।
দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতি মেটাতে খোলাবাজারের এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছে।