ঢাকা : সরকার সবদিক থেকে গণ-ধিকৃত অবস্থার মধ্যে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দিলে ২০০১ সালেও ক্ষমতায় আসতাম শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আপনি কোনো বারই সঠিক পন্থায় ক্ষমতায় আসেননি, আপনি আন্তর্জাতিক মাস্টার প্লানের মাধ্যমে সব সময় ক্ষমতায় এসেছেন। কারণ আপনি দেশকে ভালোবাসেন না, দেশের মানুষকেও ভালোবাসেন না। যদি ভালোবাসতেন তাহলে আপনি দিনের ভোট রাতে করেন কেনো? আপনি দেশের প্রধান বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক দলগুলো বাদ দিয়ে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করেন কেন? আপনি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারি দরে মামলা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখেন কেনো? আপনার অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আপনি দেশ বিক্রি করেছেন বলেই আপনি দেশের গণতন্ত্রকে বিক্রি করছেন, দেশের নাগরিকত্বকে বিক্রি করছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রীকে জেলখানায় ভরে মানুষের অধিকারকে বিক্রি করে আজকে ক্ষমতায় রয়েছেন। আপনি সবচাইতে বড়ো বিক্রেতা, অবৈধ বিক্রতা।
রবিবার (১৭ অক্টোবর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নীচ তলায় কৃষক দল আয়োজিত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, সরকারের যে গণ-ধিকৃত অবস্থান সেখান থেকে নিজেদের ভাবমূর্তি বাঁচানোর জন্য পরিকল্পিত ও চক্রান্তমূলকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছেন। কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনা, শেখ হাসিনা তার যে গণতন্ত্রহীনতা, তার যে গণতন্ত্র হত্যা সব কিছু মিলিয়ে আজকে যে গণ-ধিকৃত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। সেখান থেকে নিজেদের ভাবমূর্তি বাচানোর জন্য পরিকল্পিত ও চক্রান্তমূলকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছেন এবং আমাদের ঐতিহ্যকে ধুলায় লুণ্ঠিত করেছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যেই ব্যক্তির সুস্থতা কামনায় আজ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে, সেই মহান ব্যক্তিটি আমাদের ছাত্র জীবন থেকে প্রেরণা যুগিয়েছেন সাহস যুগিয়েছেন। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করতে হয়। দেশ এবং জাতির ক্রান্তিকালে কিভাবে দেশকে পরিচালনা করতে হয় সে অদম্য দৃষ্টান্ত তিনি দেখিয়েছেন; তার নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অসুস্থ থাকার পরও দেশের মানুষের প্রতি যার প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার থেকে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, আজকে এই সরকার শুধুমাত্র অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রীকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। সুচিকিৎসা তার নাগরিক অধিকার, মৌলিক অধিকার সে অধিকারও হরণ করছেন শেখ হাসিনা, আর বড় বড় কথা বলছেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আপনি (শেখ হাসিনা) দেশের স্বার্থ বিক্রি করেননি? দেশের স্বার্থ বিক্রি করছেন বলেই আজকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। আপনি কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তাদেরকে তাদের নিজ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেননি। এখানেও দেশের স্বার্থ বিক্রি করেছেন। কি কারণে যে, আপনি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবেন না। আপনি নোবেল প্রাইজ পাওয়ার জন্য আপনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে বিক্রি করে দিয়েছেন। আপনি দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, আজকে সকলেই জানে আপনি অনেক চুক্তি করেছেন গোপনে। সেই চুক্তি জনগণের সামনে আপনি উপস্থাপন করেননি, আপনি পার্লামেন্টেও সেটা নিয়ে আসেন নি। আপনি দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আপনি ক্ষমতায় রয়েছেন। আজকে কোন স্বার্থে কে আপনাকে ক্ষমতায় রেখেছে? আপনি তো নির্বাচিত নন, এটা আপনি ভালো করেই জানেন। সারা দেশের মানুষের হৃদয়ের ভাষা আপনি টের পান ঠিকই কিন্তু বলতে চান না।
সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন,আমাদের দীর্ঘদিনের হাজার বছরের সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য সেই ঐতিহ্যকে সংঘাত সংঘর্ষের মধ্যে ফেলে দিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিক্রি করে দিয়েছেন। স্বার্থে নিজেকে ক্ষমতা রাখার জন্য। তিনি দেখাচ্ছেন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এখানে কেউ প্রতিক্রিয়া জানালে এখানে কেউ ক্ষুব্ধ হলে আমিতো গুলি চালাচ্ছি, মানুষ মেরেও ফেলছি। আমাকে আন্তর্জাতিক ভাবে সুদৃষ্টিতে দেখবে আমাকে ভালো জানবে যে, আমি এখানে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। এটা কৃত্রিম ভাবে তৈরি শেখ হাসিনার, এটা পরিকল্পিত ভাবে তৈরি শেখ হাসিনার।
তিনি বলেন, এই সরকার ও এই সরকারপ্রধান এরা মানুষ চায় না, এরা নাগরিক স্বাধীনতা চায় না। ওরা নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকাটাই বড়ো মনে করে। সেই কারণে এক এক করে ধ্বংস করেছেন আমাদের সকল প্রতিষ্ঠানকে। আপনি আদালতে যাবেন যদি দেখা যায় আপনি বিএনপির কোন নেতা তাহলে আপনি বিচার পাবেন না। আর সরকার যেটা বলে দেবে আপনার বিচারের রায় সেটাই হবে। আপনি আক্রমণের স্বীকার হয়েছেন আপনি পুলিশের কাছে যাবেন পুলিশ উল্টো আপনার নামে মামলা দেবে কারণ আপনি বিএনপি করেন। আপনি সত্য কথা লিখবেন আপনার নামে মামলা হবে, আপনি মুক্ত কন্ঠে কথা বলবেন বপনার গলায় দরি ঝুলবে। এই হচ্ছে শেখ হাসিনা।
সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে কৃষকদলের সহ-সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী,যুগ্ম-সম্পাদক টি এস আইয়ুব,সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ,বর্তমান দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।