ঢাকা: প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোর্ট হচ্ছে মেডিক্যাল সেবার মতো সার্ভিস। আমার মনে হয় ২৪ ঘণ্টা কোর্ট খোলা থাকা উচিত। এটা তো সার্ভিস। ভারতের গুজরাটে তো ইভিনিং (সান্ধ্যকালীন) কোর্ট চালু আছে।’
‘আদালত মেডিক্যাল সেবার মতো একটি সার্ভিস’ মন্তব্য করে ২৪ ঘণ্টা এটি খোলা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
মামলা জট কমাতে ভার্চুয়াল আদালতের আওতা বাড়ানোর পক্ষেও অবস্থান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জজ সাহেবরা যদি বাসা থেকে কাজ করেন তাহলে দ্বিগুণ কাজ হবে। ভার্চুয়াল কোর্ট ছাড়া জুডিশিয়ারির কোনো মুক্তি নেই।’
জেল আপিল নিষ্পত্তির পর ফাঁসি কার্যকর হওয়া চুয়াডাঙ্গার আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর নিয়মিত আপিল শুনানির সময় বুধবার প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
ভার্চুয়াল কোর্টের কারণে সম্প্রতি বেশ অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ম্যানুয়ালি মামলার শুনানির সময় আগে প্রতি রোববার কয়েক ঘণ্টা সময় যেত মামলা জরুরি উল্লেখ করে তালিকা করতে। আগে আপিল বিভাগে মামলা ছিল ২৩ হাজার। আর ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি হয়ে মামলা কমে এখন আছে সাড়ে ১৫ হাজার।
‘এই প্যানডেমিকের সময়ে দেশের সব আদালতে মামলা সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু আপিল বিভাগে মামলা কমেছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর থেকে ফিজিক্যাল কোর্ট খুলে দেব, তবে ভার্চুয়াল কোর্টে কাজ হয় ডাবল। ধরুন এখন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রয়োজন। অথচ তিনি আছেন অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে। তার আসতে ১৫ মিনিট সময় নষ্ট হলো। আর ভার্চুয়ালে হলে অ্যাটর্নি জেনারেল একই চেয়ারে বসে থাকেন, জাস্ট একটি টিপ দিয়ে দেন।
‘তা ছাড়া আপিল বিভাগের সব আইনজীবী বয়স্ক, যাদের অধিকাংশের বয়স ৭০ এর বেশি। উনারা যখন বাসায় থাকেন তখন কোনো সময় নেন না। ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম নিজের বেডরুম থেকে শুনানি করেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা সবাই ফিজিক্যাল কোর্টের ভক্ত, তবে ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট আপার হাউজে বলেছেন, কোর্ট ডাজ নট ইন এ পার্টিকুলার বিল্ডিং (কোর্ট একটি নির্দিষ্ট ভবনে আবদ্ধ নয়)।
‘ভার্চুয়াল কোর্টে রোকন উদ্দিন মাহমুদ সুইজারল্যান্ড থেকে শুনানি করেছেন। আজমালুল হোসেন এখনও সিঙ্গাপুর থেকে শুনানি করেন। তানজিব উল আলম লন্ডন থেকে শুনানি করেছেন। এ রকম অনেকেই আছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলও দেশের বাইরে থেকে শুনানি করেছেন। এখানে তো ছুটির নেয়ার প্রয়োজন হবে না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোর্ট হচ্ছে মেডিক্যাল সেবার মতো সার্ভিস। আমার মনে হয় ২৪ ঘণ্টা কোর্ট খোলা থাকা উচিত। এটা তো সার্ভিস। ভারতের গুজরাটে তো ইভিনিং (সান্ধ্যকালীন) কোর্ট চালু আছে।’
এ সময় বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘তাহলে আমরা হলি ডে কোর্ট চালু করে দিই।’
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা হয়েছে মাই লর্ড। গতবার বন্ধের সময় এটা হয়েছে। আপনারা বন্ধের মধ্যে বসেছিলেন। ওই মামলায় আমিও ছিলাম। ওই বন্ধের সময় ২৫৬টি মামলার শুনানি হয়েছে।’
বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘শনিবারও হলি ডে কোর্ট খোলা রাখা যায়। সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত কোর্ট খোলা রাখা যায়। আইনজীবীরা যেহেতু চায়, এটা করা যায়। সবাই তার বাসা থেকে শুনানি করবেন সমস্যা কী!’
এ সময় আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘এটা উচ্চ আদালতে করা যায়, কিন্তু নিম্ন আদালতে সমস্যা হবে।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওটা আরও সহজ। আমেরিকা বসে সাক্ষী সাক্ষ্য দেবে। সাক্ষীর অভাবে কত মামলা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের যেকোনো স্থানে বসে সাক্ষী তার সাক্ষ্য দিতে পারবে।
‘আসামিদের জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করাও দরকার নেই। ভার্চুয়াল কোর্টের ফলে সড়কে যানজটও কমে যাবে। হাজার হাজার আইনজীবীকে কোর্টে আসতে হবে না। জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হবে। ভার্চুয়াল ছাড়া মামলার জট কিছুই যাবে না। এতে জাজও অনেক বাড়ানো যায়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেভাবে আগাচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিপ্লব হয়ে যাবে। এখন বাংলাতে কথা বললেই মোবাইলে লেখা হয়ে যায়। এটাতে জজ সাহেবদের কষ্ট কমে যাবে, তারা মুখে বলবেন আর লেখা হয়ে যাবে।’