ঢাকা: আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর কওমি মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। সরকারও কওমি অঙ্গনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই বড় জনগোষ্ঠীকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। কওমি অঙ্গনে আল্লামা শফীর গ্রহণযোগ্যতা ও সরকারের সঙ্গে সখ্য থাকায় দীর্ঘসময় উভয়পক্ষে ইতিবাচক পরিবেশ বিরাজ করছিল।
তবে তার অবর্তমানে সেই অবস্থা নেই। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর দুই পক্ষের সেই ইতিবাচক পরিবেশ বর্তমানে চরম নেতিবাচক অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার পরম্পরায় দেখা গেছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তার অবর্তমানে জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটির অধিকাংশ আওয়ামী মনোভাবাপন্ন ছিলেন না।
যার কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে প্রতিবাদ ও তৎপরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় বেকায়দায় পড়ে সংগঠনটি। ওই ঘটনার পর হেফাজতের বেশিরভাগ নেতাকে জেলে পাঠানো হয়।
যারা বাইরে ছিলেন, তারাও দীর্ঘদিন দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে কোনো সুফল পাননি। পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করেও সাড়া মেলেনি।
এরইমধ্যে গত ১৯ আগস্ট মারা যান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তাকে দাফনের আগেই তার মামা সংগঠনের উপদেষ্টা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে আমির নিযুক্ত করে হেফাজত।
এ অবস্থায়, কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়া, আলেমদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সখ্য কোন পর্যায়ে-জানতে কথা হয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও হেফাজত নেতাদের সঙ্গে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার আলেমদের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে পক্ষে রাখতে চায়। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কওমি মাদরাসাগুলোও খুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি কারাবন্দি হেফাজত নেতাদের মুক্তিও দেওয়া হচ্ছে। ফুটেজ দেখে অপরাধী ছাড়া বাকি সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের দূরত্ব আদর্শিক। এ দূরত্ব ঘোচানো সম্ভব নয়। তবে কারো গণতান্ত্রিক চিন্তা ও শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই। আবার জ্বালাও-পোড়াও বা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্য উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে কোনো ছাড়ও নয়।
হেফাজত নেতারা বলছেন, তারা সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বসছেন, তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বের দাবি আদায়ে সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে খোদ হেফাজতে। এদিকে কওমি মাদরাসা খোলার বিষয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একটা সিদ্ধান্ত আসবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা বহুবার দেখা করেছি, কথা বলেছি, সবসময়ই তারা আশ্বাস দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত ২৯ আগস্টও আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, এবারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে এবারের আশ্বাসে মনে হয়েছে, সহসাই মাদরাসা খুলে দেবেন।
হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি বলেন, আমি শুধু আল হাইয়া বা বেফাক (শিক্ষা বোর্ড) নিয়ে আছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতের এক শীর্ষনেতা বলেন, হুজুররা আস্তে আস্তে তো জামিন পাচ্ছেন, একজন একজন করে তো বের হচ্ছেন।
সমঝোতা বা সুরাহার পথ তো দেখা যাচ্ছে। জমিয়ত ২০ দলীয় জোট ছাড়লো, সে মোতাবেক তাদের তিনজন ছাড়া সবাই মুক্তি পেয়ে গেছে। তবে দলীয় আলেমরা জামিন পাননি, পাশাপাশি নির্দলীয় ইসলামিক বক্তারাও জামিন পাননি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, হেফাজতের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানো সম্ভব না। কারণ এটি আদর্শিক দূরত্ব। তবে যতটুকু মিনিমাইজ করে চলা যায়!