শিরোনাম :
টানা তিন দিন বিছানায়, ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়ে মাঠে নেমেই ম্যাচসেরা সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮ মস্কো হামলার ঘটনায় এখনও নিখোঁজ ১৪৩ বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের ৯ মাসেই ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক অকালমৃত্যুর ৫৩ শতাংশই দূষণে ভিকারুননিসায় আরও ৩৬ ছাত্রীর ভর্তি জালিয়াতির তথ্য ফাঁস গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যু দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫ রাখাইনে জান্তার আরেক ব্যাটালিয়ন দপ্তর আরাকান আর্মির দখলে বিএনপি নেতারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন: কাদের মেহেদির রং শুকানোর আগে প্রাণ গেল তরুণের ঘরের কাজে ব্যস্ত মা, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্যের ডাক

সুজানগর প্রকল্পের ৬ কো‌টি টাকা নয়-ছয়!

  • সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

ঢাকা: পাবনার সুজানগর পৌরসভা এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন প্রকল্পের পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ টাকাই গচ্ছা গি‌য়ে‌ছে।

সুজানগর পৌরসভা সূত্র জানা গে‌ছে, সুজানগর পৌরসভায় আসেনিকমুক্ত সুপেয় পানি ও নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় হলেও বিগত ৬ বছরে-এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না সুজানগর পৌরবাসী। ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্পটি। বহুল আলোচিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে সুজানগর পৌরবাসীকে আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা করা না গেলেও পাঁচজন পাম্পচালক ও একজন মেকানিকের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ২০ লাখেরও বেশি টাকা পৌরসভা থেকে গচ্ছা দিতে হচ্ছে প্রতি বছর।

পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে খুলনার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছি‌লেন। পিডি নিজেই টেন্ডার আহ্বানকারী ও বিল পরিশোধকারী হওয়ায় তিনি তৎকালীন সুজানগর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও পছন্দের পাবনার ঠিকাদারকে দিয়ে যেনতেনভাবে পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ টাকা খরচ দেখান। নিম্নমানের পাইপ দিয়ে লাইন বসানোয় পানি ছাড়ার সাথে সাথে তা ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় নির্মাণের পর থেকে পানি সরবারাহ বন্ধ রয়েছে। ডিপ টিউবওয়েল বসানোর পরপরই তাও অকেজো হয়ে আছে। এমনকি নির্মাণের পর থেকে দু’টি পাম্প ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও বিদ্যুতের মাধ্যমে পাম্প ও মোটর সচল দেখিয়ে এবং প্রকল্পের অন্যান্য কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১৫ সালের জুন মাসের ২৯ তারিখের মধ্যেই পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।

আর এ কাজের জন্য পাবনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জামানুর রহমানের দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগের তদন্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (গাস অধিশাখা) ও পাবনার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা দিনব্যাপী সুজানগর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির সরেজমিন তদন্ত করেন। এ বিষয়ে তারা (তদন্ত কমিটির সদস্যরা) ভুক্তভোগী স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি সুজানগর পৌরসভার আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পে প্রাথমিক তদন্তে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পেয়েছেন।

তদন্তের সময় পাবনা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোখলেচুর রহমান, পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) জামানুর রহমান, সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন, পৌর মেয়র রেজাউল করিম রেজা, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল ওহাব, তোফা হোসেন তোফা, পাবনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম, পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম নবী, সুজানগর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মামুনর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুজানগর পৌরসভার আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ২০১০-১১ অর্থ বছরে পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প হাতে নেয়। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় সুজানগর পৌর এলাকায় ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের ১.১০ কিলোমিটার, ১৫০ মিলিমিটার ব্যাসের ৪.৪২ কিলোমিটার, ১০০ মিলিমিটার ২৩.৯৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন, উৎপাদক নলকূপ পাঁচটি, পাশঘর পাঁচটি, পাম্প ও মোটর ক্রয় পাঁচটি, সারফেস ড্রেন পাঁচ কিলোমিটার, ডাস্টবিন ১২টি, পাবলিক টয়লেট চারটি, তারা নলকূপ স্থাপন ৩০টি, অটো ভোল্টেজ রেগুলেটর ক্রয় পাঁচটি, দুটি কম্পিউটার ও ১৪২৫টি বাড়িতে পানির মিটার সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে নিম্নমানের পাইপ দিয়ে পানির লাইন বসানোর কারণে পানি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ফেটে যাওয়ায় নির্মাণের পর থেকে পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ডিপ টিউবয়েলগুলো বসানোর পর থেকে অকেজো হয়ে আছে। পাম্পঘর নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত চরভবানীপুর এলাকার পাম্পঘরসহ দুটি পাম্পঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও পাম্প ও মোটর সচল দেখানো হয়।

প্রকল্পের অন্যান্য কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১৫ সালের জুন মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়। এ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সুজানগর পৌরসভা সূত্র জানায়। বর্তমানে প্রকল্পটি পৌরবাসীর কোনো উপকারেই আসছে না বলে জানা গেছে।

পাম্প চালকরা এ প্রতিবেদককে জানান, পাম্প চালু করার সঙ্গে সঙ্গে পাইপ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তাই পাম্প বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পানির পাইপ লাইন বসানো হলেও জনসাধারণের পানি সরবরাহ কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

সাবেক মেয়র আব্দুল ওহাব ও তোফাজ্জল হোসেন তোফা জানান, ‘প্রকল্প কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।’

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (পাস অধিশাখা) মো. জসিম উদ্দিন জানান, ‘অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানানো হবে।’

আমাদের হাতে আসা প্রাপ্ত নথি-পত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, স্থানীয় সরকার বিভাগ পরিদর্শন শাখার অফিস স্বারক – ১৭৪ এবং তারিখ – ১৫/৪/২০১৯ মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলীকে বর্ণিত প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জামানুর রহমান এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সুপারিশ করেন কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। শুধু তাই না বর্ণিত অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে বিদেশ সফরে পাঠিয়েছেন। এমনকি শুদ্ধাচার পুরুস্কারে পুরুস্কৃত করেছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস স্বারক ৫১৮১ তারিখ ২০/০৬/২০২১ এর একটি অফিস আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে ১৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে শুদ্ধাচার পুরুস্কার প্রদান করা হয়। যারা প্রত্যেকেই প্রধান প্রকৌশলীর খাস লোক এবং এই তালিকা প্রস্তুত করার জন্য তিনি কোন সম্ভা, অথবা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সুপারিশ গ্রহণ করেননি; একক ব্যাক্তি সিদ্ধান্তে তা করেছেন বর্ণিত তালিকায় অনেক নিষ্টাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম না দিয়ে বিতর্কিত জামানুর রহমানের নাম দিয়েছেন। এ যেন তিরস্কারের বদলে পুরুস্কার।

এ দিকে গত ৪ অগাস্ট ২০২২ তারিখে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ভবনের কতিপয় সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান পূর্বের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের আশ্রয়ে নিজের ও তার একান্ত সুবিধাভূগী দুই একজন বিপথগামী কর্মকর্তার অপকর্ম ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার অপকর্ম অবাধে চালিয়ে যায়।’

আরো বলেন, ‘সাইফুর রহমান ও আমানুর রহমানের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীর। প্রধান প্রকৌশলী শৈশবে নিজ জেলা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় আর আমানুর রহমান পাশবর্তী কুষ্টিয়াতে বসবাস করতেন। উভয়ের বাবাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমানুর রহমানের বাবা ছিলেন প্রয়াত মতি মিয়া তিনি তৎকালীন পাকস্তিানীদরে শা‌ন্তি কমিটির চেয়ারম্যান অর্থাৎ রাজাকারদরে কমান্ডার। মতিমিয়ার বাড়ি তৎকালীন মজমপুর ইউনিয়নে বর্তমানে কুষ্টিয়া পৌরসভার ‘মতমিয়া রেলগেট সংলগ্ন’। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ওই স্থানের নাম দেন মতিমিয়া রেলগেট। সাইফুর রহমানের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান ছিলেন কুখ্যাত জামাত নেতা সোবহান মাওলানা ও মতিউর রহমান নিজামীসহ মতিমিয়ার আস্থাভাজন। এসব কারণে সাইফুর রহমান ও জামানুর রহমানের সম্পর্ক অনেক গভীর।’

জানা যায়, সাইফুর রহমানের নিজ জেলা পাবনায় বলে ৯ বছরের অধিক সময় জামানুর রহমান নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধান প্রকৌশলীর আত্মীয় স্বজনদেরকে লালন করেছেন। এসব কারণে প্রধান প্রকৌশলী সুজানগর পৌরসভার পানি প্রকল্পের পুকুরচুরির বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য আনতে পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জামানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিষয়ে তার মু‌ঠোফো‌নে কল করা হ‌লে তি‌নি রি‌চিভ ক‌রেন নি। তার মু‌ঠো‌ফো‌নে ক্ষু‌দে বার্তা পাঠা‌নো হ‌লে কোন উত্তর পাওয়া যায়‌নি।

 

সংবাটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খরব
© Copyright © 2017 - 2021 Times of Bangla, All Rights Reserved