ঢাকা: দেশে রক্তধারা প্রবাহিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সন্ত্রাসীদের নেতায় পরিণত হতে চাচ্ছেন কিনা তা জানতে চান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ’ কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
নাছিম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত দেশকে ব্যর্থ বানাতে সবসময় ষড়যন্ত্র করছে। তাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল গতকাল বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনো চায় না বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসুক। কারণ তারা জানে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাকি মারা যাবে। আমি বলতে চাই মির্জা ফখরুল আপনি কি আমাদের হুমকি দিচ্ছেন? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আপনারা ক্ষমতায় গেলে আমাদের হত্যা করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে হত্যা করে রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল আপনি কি সন্ত্রাসীদের নেতায় পরিণত হতে চাইছেন?’
বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে নাছিম বলেন, ‘আমরা এতদিন জানতাম না আপনি নিজেও হত্যাকারী হতে চান। আপনি সন্ত্রাসীদের ভাষায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন, আমাদের মৃত্যু হবে, আমাদের হত্যা করা হবে। আমি বলতে চাই, আমাদের হত্যা করা যায় কিন্তু আমাদের পথরোধ করা যায় না ও বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করা যায় না। কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তানরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের হত্যা করলে আমরা শহীদ হব, গাজী হব। বীরের রক্ত আমাদের শরীরে। আমাদের হত্যার ভয় দেখিয়ে থামানো যাবে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ার সেই অজপাড়া গাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে উঠেছিলেন এবং পরবর্তীতে বঙ্গমাতার সঙ্গে তিনি পারিবারিকভাবে ঢাকায় আসেন ছয় বছর বয়সে। বঙ্গবন্ধুকন্যা অত্যন্ত সাদামাটা পরিবেশেই সুখ আনন্দ বেদনার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠেন। তার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক দিনটি হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন স্বাধীন বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর সব আয়োজন করা হয়েছিল।’
নাছিম বলেন, ‘১৯৮১ সালের ১৯ মে ভারতের ৬ বছর রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেদিন অবৈধ রাষ্ট্রপতি সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি দেশে আসেন। সে দিন তার আগমনকে নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে আগমনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ তার অস্তিত্ব ফিরে পেয়েছে। শেখ হাসিনার আগমনের আগে বাংলাদেশ তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া শুরু হয়েছিল। তিনি ফিরে এসে দেশের জনগণকে উদ্ধার করেছেন। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে খুনি মোস্তাক ও জিয়া গংরা সব আয়োজন করেছিল। শেখ হাসিনা ফিরে আসার পর দেশের মানুষ আশার আলো দেখে, অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে পথে প্রান্তরে ও দেশের মানুষের কাছে ঘুরে বেড়িয়েছেন।মানুষের সুখ দুঃখের ও অভাব অভিযোগের কথা শুনেছেন। মানুষ কি চায় সেটা জেনেছেন। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশকে গড়ে তোলার জন্য সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। সে সময় দেশের মানুষ তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সফল হয়ে আজকে বাংলাদেশকে উন্নতশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।’
আজ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার জন্য। আমাদের উন্নয়ন ও আদর্শের নেত্রী হলেন শেখ হাসিনা। তিনি হলেন সততার নেত্রী ও যোগ্য নেত্রী, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এসেছে। শেখ হাসিনার কারণে আমরা বিশ্ব দরবারে সন্মানিত ও সন্মানের জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। একজন শেখ হাসিনার কারণে আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেয়েছি। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়। আজ তার নেতৃত্বে আমরা উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য উপ-বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। জানুয়ারির ১ তারিখে সকল প্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছে দিচ্ছেন। তার কারণে দেশে ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূন্যের কোটায় এসেছে।’
নাছিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা করোনা সংকট মোকাবেলা করেছি। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বর্তমানে বৈশিক যে অর্থনৈতিক সংকট তা আমরা মোকাবেলা করছি এবং দেশ বিরোধী অপশক্তি বিএনপি জামায়াত যে মিথ্যাচার করছে তাদের মুখে চুনকালি দিয়েছি। আমরা প্রমাণ করেছি যে শেখ হাসিনা যতদিন নেতৃত্বে থাকবেন ততদিন আর যাই হোক বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচি কে এম শহিদ উল্যার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।