আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের যেসব এলাকা রাশিয়া দখল করে নিয়েছে, সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া – এমন এক স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেফ ।
মি. মেদভেদেফ টেলিগ্রামে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন, “ডনবাস প্রজাতন্ত্রগুলো ও অন্যান্য এলাকাগুলোতে গণভোট হবে, এবং এগুলো রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী এসব ভূখন্ডের সুরক্ষা অনেক বেশি জোরদার করবে।”
তিনি এ বার্তায় বলেন, এ ধরনের সুরক্ষার জন্য শুধু রিজার্ভিস্ট সৈন্যরা নয়, ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ এবং নতুন প্রযুক্তির অস্ত্রসহ যে কোন রকম অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে বলে রাশিয়া ঘোষণা করেছে।
মি. মেদভেদেফ নেটোর “অবসরপ্রাপ্ত নির্বোধ সেনানায়কদের” পরামর্শ দেন – যেন তারা ক্রাইমিয়ায় নেটোর আক্রমণের কথা বলে রাশিয়াকে ভয় না দেখান।
এর আগে বুধবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দেয়া ভাষণেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত ছিল বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
মি. পুতিন তার ওই ভাষণে ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত এলাকাগুলোর জনগণকে রক্ষার জন্য রিজার্ভিস্ট সেনা সমাবেশের কথা ঘোষণা করেছিলেন – যে এলাকাগুলোকে রাশিয়ার অংশ করে নেবার জন্য অচিরেই গণভোট অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে।
মি. পুতিন এ প্রসঙ্গে বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব তার দেশকে ধ্বংস করতে চায় এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তার দেশ “সম্ভাব্য সব উপায়” ব্যবহার করবে। তিনি আরো বলেন, এ কথা কোন “ফাঁকা বুলি” নয়।
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার কি ‘অত্যাসন্ন?’
বিবিসির বিশ্লেষক গর্ডন কোরেরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার এখনো বেশ দূরের ব্যাপার।
তিনি বলছেন, রাশিয়ার সামরিক নীতি অনুযায়ী, শুধুমাত্র রুশ রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়লেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে । মি. পুতিন তার হুঁশিয়ারি দেবার সময় ‘পশ্চিমা হুমকির জবাব দেবার’ কথা বলেছেন।
আর “ফাঁকা বুলি”-র কথাটা তিনি বলেছেন, রাশিয়ার ভৌগলিক সীমা হুমকির মুখে পড়ছে এমন একটা পরিস্থিতির প্রসঙ্গে।
গর্ডন কোরেরা বলছেন, ইউক্রেনের তথাকথিত গণভোটের পর রাশিয়ার ভূখণ্ডের সীমানা কতদূর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে বলে মি. পুতিন মনে করেন – সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
রুশ সেনা মোবিলাইজেশন শুরু হয়ে গেছে
রাশিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করা এবং রুশ-অধিকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চলের জনগণকে রক্ষা করার কথা বলে রিজার্ভিস্ট সৈন্য সমাবেশ করার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ নিয়ে একটি ডিক্রিতে সই করেছেন তিনি এবং ইতোমধ্যেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
রাশিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী সামরিক বাহিনীতে কাজ করার পূর্ব-অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ আছে এমন তিন লক্ষ রুশকে সেনাবাহিনীতে নেয়া হবে। রাশিয়ায় প্রায় আড়াই কোটি এমন যোগ্যতাসম্পন্ন লোক আছে এবং তাদের একটি অংশকে রিজার্ভিস্ট হিসেবে নেয়া হবে। সেনাবাহিনীতে কাজ করার উপযুক্ত বয়স আছে এমন ব্যক্তিদের এ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেয়া হচ্ছে। তবে এই মোবিলাইজেশনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বহু শহরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে।
রুশ ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, উফা, ইয়েকাতেরিনবার্গ, চেলিয়াবিনস্ক, এবং সাইবেরিয়া অঞ্চলের আরো বেশ কিছু শহরে এসব বিক্ষোভে শত শত লোক যোগ দেয় ।
কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া হওয়া এসব সমাবেশ থেকে পুলিশ বহু লোককে আটক করেছে। খবরে বলা হয়, রাশিয়ার মোট ৩৮টি শহর থেকে ১৩০০-র বেশি লোককে আটক করা হয়েছে। এই বিক্ষোভকারীদের অনেককে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার কাগজপত্র ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এমন খবর ক্রেমলিনের মুখপাত্র অস্বীকার করেননি।
সেনাবাহিনীতে যাওয়া এড়াতে দেশ ছাড়ছে অনেক রুশ
প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভাষণের পরপরই সেনাবাহিনীতে যাওয়া এড়াতে বহু রুশ দেশ ছাড়ছে।
অনেকেই রাশিয়ার পার্শ্ববতী জর্জিয়ায় চলে যাবার জন্য সীমান্তে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন পড়ে গেছে। জর্জিয়া হচ্ছে অল্প কয়েকটি দেশের অন্যতম যেখানে রুশরা কোন ভিসা ছাড়াই যেতে পারে।
অন্য অনেকে ফিনল্যান্ড, কাজাখস্তান ও মঙ্গোলিয়া চলে যাবার চেষ্টা করছে। এ ছাড়াও রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে আরমেনিয়া, তুরস্ক, আজারবাইজান এবং সার্বিয়ায় যাবার বিমানের টিকিট সব বিক্রি হয়ে গেছে। তবে রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকফ বলছেন, এসব খবর অতিরঞ্জিত।
রাশিয়া-ইউক্রেন বন্দী বিনিময় সম্পন্ন
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর সবচেয়ে বড় বন্দী বিনিময় আজ সম্পন্ন হয়েছে – যার পেছনে তুরস্কর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও সৌদি আরবের ভূমিকা রয়েছে। ।
এর আওতায় ২০০ জনেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান বন্দীকে রুশরা মুক্তি দিয়েছে, আর বিনিময়ে ইউক্রেনীয়রা ৫৫ জন রুশ, এবং একজন রুশ-সমর্থক ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদ ভিক্টর মেদভেদচুককে মুক্তি দিয়েছে। এই মেদভেদচুক মি. পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ ছিল।
ইউক্রেনীয় যারা মুক্তি পেয়েছে তাদের মধ্যে আছে আজোভ রেজিমেন্টের একশ’র বেশি যোদ্ধা – যারা মারিউপোল শহরের অবরুদ্ধ ইস্পাত কারখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইতোমধ্যেই তাদের পাঁচজন কমান্ডারের সাথে ভিডিও লিংকে কথা বলেছেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আজোভ কমান্ডাররা এখন তুরস্কে অবস্থান করবেন।
এ ছাড়া ১০ জন বিদেশী যোদ্ধাও মুক্তি পেয়েছেন এবং তারা সৌদি আরব হয়ে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন ব্রিটিশ নাগরিক আছেন যারা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছে। বাকিরা মরক্কো, সু্ইডেন, ক্রোয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ।
সূত্র: বিবিসি